গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বাধাগ্রস্ত হলে একনায়কতন্ত্র মাথাচাড়া দিতে পারে

সুলতানা কামাল
ফাইল ছবি

যেকোনো সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশে নানা মত থাকবে। বিভিন্ন দ্বার খোলা থাকবে। সবাই সব মতের পক্ষে থাকবে না। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বিরোধী মত বা পক্ষের গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন পরিস্থিতি বাঞ্ছনীয় নয়। বিশেষ করে এখন যখন জাতীয় নির্বাচন সমাসন্ন। এই সময় মানুষ নানা রাজনৈতিক বিকল্পের সন্ধান করে। মানুষ তার মতের প্রতিফলন দেখতে চায়। জনগণের এই অংশগ্রহণ ও অংশীদারত্বের অধিকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। সেই শর্ত ভঙ্গ করা মানে গণতন্ত্রের বিপদ ডেকে আনা। এর ফলে পরিস্থিতি নাজুক হতে পারে। কারণ, এতে এমন একটি রাজনৈতিক বন্ধ্যত্ব তৈরি হয়, যে পরিস্থিতিতে অগণতান্ত্রিক শক্তি উৎসাহিত হয়। যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, তারা অন্ধকার ঠেলে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। সাধারণ গণতন্ত্রকামী মানুষের অধিকার সংকুচিত হওয়ার পথ সৃষ্টি হয়। এমন পরিবেশের যেন সৃষ্টি না হয়, তার জন্য সব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখেছি, তিনি বারবার গণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশের পক্ষে বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, তাদের জন্য পরিসর সৃষ্টির কথা তিনি বলেছেন। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা শুনেছি। একজন নাগরিক কতটা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে সক্ষম, সাংস্কৃতিক মুক্তির সঙ্গে সে বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সমুন্নত না রাখা যায়, তবে এসব অধিকার সুরক্ষিত থাকে না এবং সেই সঙ্গে মানুষের মুক্তিও সম্ভব নয়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকারের দাবির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা পর্বে এ দেশের মানুষ সার্বিক মুক্তির জন্যই লড়াই করে গেছে। যদি কোনো ক্ষমতাসীন সরকার গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় বা করে, এর ফল কারও জন্যই সুখকর হয় না। পরিস্থিতির কারণে এ ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণ তাদেরও সহ্য করতে হতে পারে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে বাধাগ্রস্ত করলে একনায়কতান্ত্রিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এর দায় শাসকশ্রেণির ওপরই বর্তায় বেশি করে।