বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতির পর ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করবে, সেই সিদ্ধান্ত তারা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। ভিসা নীতির প্রয়োগটা যে তারা শুরু করে দিয়েছে, সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিল।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই একটি চাপ। পদক্ষেপটিকে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপের অংশ হিসেবেই আমাদের দেখতে হবে। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকবেন, তাঁদের সবার ওপরই চাপটা পড়বে।
কেননা আমাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রায় সবারই ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে। তাঁদের ছেলেমেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে থাকেন। ভিসা নীতি অনুযায়ী, তাঁদের ওপরও বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা হবে। ফলে দেশে একটা যথাযথ নির্বাচন করার ব্যাপারে একটা বাস্তব চাপ আছে। কিন্তু তার ফলাফলটা কী হবে, কতটা হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্র কাদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করছে, সেটা এখনই জানা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করে। নানা মাধ্যমে নানা ধরনের ব্যক্তির তালিকা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর কোনোটারই যাচাই-বাছাই ছাড়া সত্যতা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে সংক্ষিপ্ত তালিকার কথা বলেছেন, তিনি সেটা কোন ভিত্তির ওপর বলেছেন, সেটা বোধগম্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় জানিয়েছিল, রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ পদক্ষেপকেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে পৃথকভাবে দেখার সুযোগ নেই। ইইউ যে প্রাক্-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছিল, তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত বাজেট–ঘাটতির কারণে পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না, এ বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করি না। তারা মনে করেছে, এবারও একটা যথাযথ নির্বাচন হওয়ার পরিবেশ নেই।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের এই চাপটা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহতভাবে থাকবে। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ২০২১ সালে র্যাব ও বাহিনীটির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধ দিয়েছিল। এবারে তারা ভিসা বিধিনিষেধ দিয়েছে। ফলে আলাপ-আলোচনা কিংবা কূটনৈতিক তৎপরতায় তারা সরে আসবে, তেমনটা মনে করা ঠিক হবে না।
একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাটাই এখন এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে একমাত্র সমাধান। সেটা করা গেলে ভিসা নীতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কিছু থাকত না।
মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব