১৬ বছর পর বিএনপির ইফতারে অংশ নিলেন জাপা নেতারা

বিএনপির ইফতারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) বেশ কয়েকজন নেতা অংশ নেন
ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির দাওয়াতে ১৬ বছর পর ইফতারে যোগ দিলেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। আজ মাঠের বিরোধী দল বিএনপির এ ইফতারে অংশ নেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম প্রমুখ। এর আগে গত রোববার জাতীয় পার্টির ইফতারে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কয়েকজন নেতা অংশ নেন। আজ বিএনপির ইফতারে দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় ইস্কাটন গার্ডেনে লেডিস ক্লাবে রাজনীতিবিদের সম্মানে বিএনপি এ ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ ইফতার অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আমরা একমত হয়েছি, এই সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদেরকে পদত্যাগ করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সরকার পদত্যাগ করে এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ একজন নেতা জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে বিএনপির ইফতারে জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। এরপর এখন ১৬ বছর পর জাতীয় পার্টির নেতারা তাঁদের দাওয়াতে ইফতারে অংশ নেন।

বিএনপির ইফতারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)
ছবি : সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যখন আন্দোলন করছে, তখন বিএনপি ও জাতীয় পার্টি, এই দুটি দলের নেতাদের পরস্পরের ইফতারে অংশগ্রহণের ঘটনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বিএনপির লক্ষ্য নির্বাচনকালীন সরকার

ইভিএমের বদলে সব আসনে ব্যালটে ভোটের যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তাতে আগ্রহ না থাকার কথা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে আজকে জাতির যে সংকট, সেই সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে কোন সরকার থাকবে, কী ধরনের সরকার থাকবে, সেই প্রধান সংকট। সেই কারণে আজকে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, এই কারণে আমাদের যে মূল লক্ষ্য ছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের, সেই জায়গা থেকে আমরা বহুদূর সরে এসেছি।’

বর্তমান সরকারের আমলে রাষ্ট্রের সব কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান, বিচারালয়, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন সব জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‍গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য তাঁরা সংস্কারের কথা বলেছেন। সেভাবেই কাজ করছেন তাঁরা। তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ কখনোই কোনো একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। জনগণ তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে এবং সফল হয়েছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ

দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ নির্যাতিত মানুষের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনের দিন–তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সংগঠক, রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, যারা ভিন্নমত পোষণকারী, তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্নভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দেশে একটা অসহনীয় অবস্থা বিরাজ করছে।’

দেশে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, শুধু বিএনপি বা রাজনৈতিক দল নয়, সাধারণ মানুষও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। নওগাঁয় একজন নারীকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে ৩৬ ঘণ্টা পরে মিথ্যা মামলা দেখিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেওয়া হলো। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো।

এই ইফতারে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে এলডিপির অলি আহমদ, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও ফোরকান ইব্রাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ ও সাহাদাত হোসেন সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী পরিষদের রফিকুল ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান, বাংলাদেশে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন ব্যাপারী, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাপ–ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মণ্ডল, সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, সাম্যবাদী দলের নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান, মাহবুব উদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।