যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, তদন্ত ও বিচার চায় পরিবার-প্রবাসীরা

নিহত সাঈদ ফয়সাল
ছবি: সংগৃহীত

মা-বাবার একমাত্র সন্তান সৈয়দ ফয়সাল আরিফ। পড়াশোনা করতেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের বোস্টন ক্যাম্পাসে। কম্পিউটারবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা ছেলেকে নিয়ে মা-বাবা আর স্বজনদের স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু পুলিশের গুলিতে ছেলে নিহত হয়ে সব শেষ হয়ে যায়। একমাত্র সন্তান হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান পরিবার। এটিকে পুলিশি হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিচার চান প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

ফয়সালের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাতমারা ইউনিয়নে। ২০১৫ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে বলে জানান ফয়সালের বাবা মো. মুজিব উল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো খারাপ অভ্যাস ছিল না। এমনকি আমাদের পরিবারের কেউ কোনো অপরাধে জড়ায়নি কখনো। দেশেও আমাদের পরিবারের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। ছেলেকে গুলি করে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

আরও পড়ুন

স্থানীয় সময় গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে কেমব্রিজের চেস্টনাট স্ট্রিটে ফয়সাল (২০) নামের ওই তরুণ নিহত হন বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে কেমব্রিজের এক বাসিন্দা ৯১১ নম্বরে ফোনে করে জানান, এক ব্যক্তি একটি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছেন। তাঁর হাতে চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

পুলিশ গিয়ে সিডনি স্ট্রিটের একটি ভবনের পেছনে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পায়। পরে জানা গেছে, তিনি ২০ বছর বয়সী সাঈদ ফয়সাল। পুলিশ যাওয়ার পর ফয়সাল অস্ত্র হাতে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে দেখা গেছে তাঁর হাতে এক ফুট লম্বা একটি ছোরা ছিল।

খবরে আরও বলা হয়েছে, এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করলেও ফয়সালকে আটকাতে পারেননি। তিনি ছোরা নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবর্ষণ করেন এবং তাতে ফয়সাল বিদ্ধ হন। ঘটনার পর ফয়সালকে উদ্ধার করে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস এ ঘটনার তদন্ত করছে। অ্যাটর্নি মারিয়ান রায়ান বলেছেন, ফয়সাল যখন অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে আটকানোর জন্য বেশ কয়েকবার বাধা দেওয়া হয়েছিল। তবে ফয়সাল ছোরা নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করলেও ফয়সালকে আটকাতে পারেননি। তিনি ছোরা নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে আসতে থাকেন। একপর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা গুলিবর্ষণ করেন এবং তাতে ফয়সাল বিদ্ধ হন।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিটি হল প্রাঙ্গণের প্রতিবাদ সমাবেশে কমিউনিটি লিডার ইউসুফ বলেন, ‘নীরব থাকার অবকাশ নেই। আমাদের সংঘবদ্ধ আওয়াজ ওঠাতে হবে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে।’ বস্টন শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ইউসুফ বলেন, পুলিশের এ ধরনের আচরণে তিনি ‘হতবাক’। এখানে যদি পুলিশের গুলিতে মানুষের প্রাণ ঝরে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কেউ নিরাপদ নন ভাবতে হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পারভিন চৌধুরী, সেক্রেটারি তানভির মুরাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী প্রমুখ অংশ নেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া ফয়সালের চাচা সেলিম জাহাঙ্গীর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাবেশে সবার একটাই দাবি ছিল—সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার। আমরা পরিবারও চাই এটি। আগামী সোমবার কেমব্রিজের মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী বিদেশ থেকে দেশে ফিরবেন। ওই দিন বিকেলে কমিউনিটি নেতারা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তার আগে বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে।’

নিহত ফয়সালের লাশ পুলিশ বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি বলে জানান তাঁর চাচা সেলিম জাহাঙ্গীর।