সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বের ৪৯টি বামপন্থী দলের বিবৃতি
গাজা ও লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, গাজায় জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিসহ পশ্চিম এশিয়ার সার্বিক যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের ৪৯টি বামপন্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টি একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পশ্চিম এশিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নতির জন্য আমরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। লেবাননে ইসরায়েলের বহুমুখী হামলা ও স্থল অভিযানের ফলে এই অঞ্চলে নজিরবিহীন অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীর আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
ইরানের সার্বভৌমত্ব ও লেবাননের ওপর যেসব উসকানিমূলক বেআইনি ইসরায়েলি হামলা চলছে, তার ফলেই ইরান দেশটির ওপর পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলার কারণ সহজে অনুমান করা যায়।
আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান ধারা চলতে থাকলে এই অঞ্চল দ্রুত পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এক সর্বগ্রাসী চক্রে ডুবে যাবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী এক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশ ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।
ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার ১২ মাস ধরে গাজায় অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে। তেহরান ও বৈরুতে রাজনৈতিক নেতাদের নির্মমভাবে খুন করছে। দেশটি সন্ত্রাসমূলক যুদ্ধের কৌশল নিয়েছে। তারা পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নিজেদের শত্রুদের নির্মূল করতে চাইছে। এতে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলকে প্রধানত সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তারা পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন করতে চায়। তাই ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পরিকল্পনামাফিক আক্রমণাত্মক যোগসাজশ বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য ও দমন প্রতিষ্ঠিত হয়।
বামপন্থী দলগুলো মনে করে, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব পোক্ত করতে ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে। ইসরায়েল পশ্চিম এশিয়ায় পশ্চিমাদের হয়ে দাবানলে অগ্নিসংযোগকারীর ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক কোনো আইন ও সংগঠনের আহ্বানের তোয়াক্কা করছে না।
আমরা মনে করি, পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে ফিলিস্তিন সমস্যার সুনির্দিষ্ট শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান দরকার। ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরানসহ ওই অঞ্চলে লাগাতার বোমাবর্ষণ ও সামরিক হামলার ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা চাই, ইসরায়েলকে যাবতীয় গোলাবারুদ, প্রযুক্তি ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে আমাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও যুদ্ধবিষয়ক রায়গুলো বহাল রাখা হোক এবং অবিলম্বে সেগুলো বিনা বাধায় কার্যকর করা হোক।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বামপন্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টিগুলো হলো আর্মেনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, অস্ট্রিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, অস্ট্রিয়ার লেবার পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ব্রাজিলের কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিডিওবি), ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি, কানাডার কমিউনিস্ট পার্টি, সাইপ্রাসের একেইএল, বোহেমিয়া অ্যান্ড মোরাভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, ডেনমার্কের কমিউনিস্ট পার্টি, ফিনল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টি, ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি, গ্রিসের কমিউনিস্ট পার্টি (কেকেই), হাঙ্গেরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী), ইরানের তুদে পার্টি, ইরাকের কমিউনিস্ট পার্টি, কুর্দিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি-ইরাক, আয়ারল্যান্ডের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টি, ইতালির কমিউনিস্ট পার্টি, কাজাখস্তানের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, লুক্সেমবার্গের কমিউনিস্ট পার্টি, মাল্টার কমিউনিস্ট পার্টি, মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টি, নেদারল্যান্ডসের নতুন কমিউনিস্ট পার্টি, নরওয়ের কমিউনিস্ট পার্টি, প্যালেস্টাইন পিপলস পার্টি, পর্তুগিজ কমিউনিস্ট পার্টি, রাশিয়া ফেডারেশনের কমিউনিস্ট পার্টি, রাশিয়ার কমিউনিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টি, সার্বিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, স্পেনের কমিউনিস্ট পার্টি, স্পেনের শ্রমিকদের কমিউনিস্ট পার্টি, কাতালোনিয়ার কমিউনিস্ট, শ্রীলঙ্কার কমিউনিস্ট পার্টি, সুদানের কমিউনিস্ট পার্টি, সুইডেনের কমিউনিস্ট পার্টি, সিরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি, তুরস্কের কমিউনিস্ট পার্টি, ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টি, উরুগুয়ের কমিউনিস্ট পার্টি, যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টি, ভেনেজুয়েলার কমিউনিস্ট পার্টি, ইতালির কমিউনিস্ট ফ্রন্ট, পার্টি অব কমিউনিস্টস ইউএসএ।