ভোটার হতে তারেক রহমানের সঙ্গে জাইমা রহমানেরও আবেদন, ইসির সিদ্ধান্ত আগামীকাল

এই গাড়িতে চড়েই মেয়েকে নিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে আজ শনিবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানছবি: তানভীর আহাম্মেদ।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর মেয়ে জাইমা রহমানের আবেদন নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, এ বিষয়ে আগামীকাল রোববার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১৭ বছর যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার দুই দিন পর আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে যান তারেক রহমান, তাঁর সঙ্গে মেয়ে জাইমাও ছিলেন।

নির্বাচন ভবনের পেছনে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের একটি কক্ষে গিয়ে ছবি তোলা, ১০ আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া, চোখের আইরিশ (চোখের মণির ছাপ) ও স্বাক্ষর করার কাজ করেন তারেক রহমান ও জাইমা রহমান।

এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকাল নির্বাচন কমিশনে এটা পেশ করা হবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পরে উনাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।’

ভোটার তালিকায় নাম তুলতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনে গিয়ে ছবি তোলা, দশ আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া, চোখের আইরিশ (চোখের মণির ছাপ) ও স্বাক্ষর করার কাজ করেন
ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। তবে ভোটার তালিকা আইনে বলা আছে, ইসি যেকোনো সময় ভোটার হওয়ার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

এক-এগারো পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান কারামুক্ত হয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী–মেয়েকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। জাইমা তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। বিদেশে থাকায় তখন ভোটার তালিকায় তাঁরা অন্তর্ভুক্ত হননি। এর পরপর আওয়ামী লীগের শাসনকালে তাঁরা দেশে আসেননি, ভোটারও হননি।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথে এগোচ্ছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে তফসিলও ঘোষণা করেছে ইসি।

তারেক রহমান সপরিবার গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরলেও এর আগেই বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী, পৈতৃক এলাকা বগুড়ার সদর (বগুড়া–৬) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারেক রহমান। তাঁর পক্ষে স্থানীয় নেতারা ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রথম অংশগ্রহণের দেড় মাস আগে ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রক্রিয়া সারলেন।

ভোটার হচ্ছেন ঢাকা–১৭ আসনে

যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে গুলশানের বাড়িতে উঠেছেন তারেক রহমান। তাঁর পাশের বাড়িটিতে থাকেন তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন রয়েছেন বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে।

তারেক রহমান ও জাইমা রহমান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার হতে আবেদন করেছেন বলে জানান ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

যেখানে থাকছেন তারেক রহমান, সেখানেই ভোটার হতে আবেদন করেছেন তিনি। এই ওয়ার্ডটি ঢাকা–১৭ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এই আসনটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে বিএনপি ছেড়ে দেবে বলে আলোচনা রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন।

স্থানীয় নির্বাচনে যে কারও প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটার হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সংসদ নির্বাচনে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় যে কেউ দেশের যেকোনো আসনে প্রার্থী হতে পারেন।

ভোটার হওয়া ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সারতে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তারেক রহমান
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

তারেক রহমান ও জাইমা রহমানের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া যেটা আছে ফর্ম ২, ওই ফর্ম ফিলাপ করে ওনারা ছবি তুলেছেন, বায়োমেট্রিকস দিয়েছেন এবং দিয়ে ওনারা আবেদন করেছেন যে ওনাদের যেন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

এই আবেদন নিয়ে আগামীকাল পূর্ণাঙ্গ কমিশন বৈঠকে বসবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনটা চলমান প্রক্রিয়া। নিবন্ধন কমপ্লিট করেছেন তিনি। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি যেটা আগামী আপনার ১২ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সে ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত লাগবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত দুইভাবে পাওয়া যায়। একটা হচ্ছে আনুষ্ঠানিক সভা করে, আরেকটা হচ্ছে নথির মাধ্যমে।’

ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতেও নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সারেন তারেক রহমান।

এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এস এম হুমায়ুন কবীরের কাছে সকালে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, তারেক রহমানের নিবন্ধনপ্রক্রিয়াটি শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে?

জবাবে এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভবপর নয়। এটা ৫ ঘণ্টা, ৭ ঘণ্টা, ১০ ঘণ্টা, কারও কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি লাগে, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে একটু কম লাগে।

রাজধানীর বনানী কবরস্থানে আজ শনিবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটের দিকে পৌঁছান তারেক রহমান। তিনি ছোট ভাই আরাফাত রহমানের কবর জিয়ারত করেন। পরে শ্বশুরের কবর জিয়ারত করেন
ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজ থেকে

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকালে গুলশানের বাসা থেকে বের হন তারেক রহমান। তবে গত দুই দিনের মতো আজ লাল–সবুজ রঙে সাজানো বাসে যাননি তিনি। সাদা রঙের একটি গাড়িতে (এসইউভি) চড়ে যান তিনি, গাড়িটি ছিল ফুল দিয়ে সাজানো।

এই গাড়িতে সামনে চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন তারেক রহমান। পেছনের আসনে ছিলেন তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

সকালে বেরিয়ে নেতা–কর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করেন তারেক রহমান। পরে আগারগাঁওয়ে যান তিনি। নির্বাচন ভবন থেকে তিনি বনানী কবরস্থানে গিয়ে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেন।