ওলামা লীগের বিষয়ে আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এল আওয়ামী লীগ

রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওলামা লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাকা, ২০ মে
ছবি: প্রথম আলো

ওলামা লীগের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না থাকার কথা কয়েক বছর ধরেই জোরালোভাবে বলে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে সেই পরিস্থিতি হঠাৎই পাল্টে গেছে। ওলামা লীগের বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সংগঠনটির সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন।

আজ শনিবার সকালে ঢাকায় ওলামা লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তাঁর বক্তব্যে ওলামা লীগকে দলাদলি এবং চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা (ওলামা লীগ) চাঁদাবাজি করে দুর্নাম কামাবেন না। এটা অতীতে ঘটেছে। অনেকে করেছে, আপনারা সবাই জানেন।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘প্রোগ্রাম করবেন, পয়সা না থাকলে আমাকে বলবেন। আমি নিজে নেত্রীকে বলব। নেত্রী আপনাদের সব কিছু পূরণ করবেন। ওলামা লীগকে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত ও সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

আওয়ামী ওলামা লীগ তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা চেয়ে আসছিল। তবে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নারী নীতি ও শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমনকি সংগঠনটির পক্ষ থেকে পয়লা বৈশাখকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। এমনকি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়ে ওলামা লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকার কথা বলেছিল।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওলামা লীগ একবার বিপিএল (টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ) নিষিদ্ধ করা এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন বাতিলের দাবি তুলেছিল। তখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়ার স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল।

ওলামা লীগের নেতারা অন্তত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন সময় নিজেরাও সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ অস্বস্তি থেকে এত দিন ওই সংগঠনকে স্বীকৃতি না দিয়ে দূরত্ব বজায় রাখছিল। কিন্তু এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে ওলামা লীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অংশগ্রহণ এই সংগঠনকে কাছে টানার বার্তা দিচ্ছে।

ওলামা লীগের সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান। ওলামা লীগের কর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল সম্মেলনের জন্য। এখানে আওয়ামী লীগের নীতি–আদর্শের রাজনীতির প্রতিফলন হবে। ওলামা লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে তা মনে রাখতে হবে। যাঁরা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, কাজ করবেন, সংগঠনের জন্য ত্যাগ আছে, তাঁদের হাতে যেন নেতৃত্ব যায়। প্রথম কমিটি ১০১ সদস্যের হতে পারে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটিও শক্তিশালী করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আছে সরকার পতনের আন্দোলনে। আর আওয়ামী লীগ থাকবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায়। আওয়ামী লীগকে শান্তি সমাবেশ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস চাই না, শান্তি চাই। আমরা সাম্প্রদায়িকতা চাই না, আমরা চাই অসাম্প্রদায়িকতা। যে চেতনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। যে চেতনা শেখ হাসিনার।’

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, আওয়ামী লীগ চার মূলনীতিতে চলে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ওলামা লীগকেও এটি ধারণ করতে হবে। সামনে কঠিন সময় আসছে। চোখ–কান খোলা রাখতে হবে। ওলামা লীগ হবে আওয়ামী লীগের জ্ঞানী লোকের সংগঠন। প্রধানমন্ত্রী যে কথাই বলেন, তা বিশ্বাস করে বলতে হবে। এখানে মতভেদ থাকা যাবে না। প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে হাতাহাতি করা যাবে না। বেফাঁস কোনো বক্তব্য যেন না বের হয়।

ওলামা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মমিন সিরাজী বলেন, স্বাধীনতার আগে যখন ধর্ম নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়, তা রুখতে বঙ্গবন্ধু ওলামা লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের পাশে থেকে ওলামা লীগ স্বাধীনতার চেতনায় কাজ করবে।