ঢাকার প্রবেশমুখে পুলিশের তল্লাশি

ঢাকার প্রবেশমুখে যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি চলছে। গতকাল দুপুরে গাবতলী এলাকায়
ছবি: আশরাফুল আলম

১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীমুখী প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার টঙ্গী সেতুর সামনে, গাবতলী, আমিনবাজার ও সায়েদাবাদ এলাকায় যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটর গাড়ি ও মাইক্রোবাসে বেশি তল্লাশি ছিল। এমনকি কোনো পথচারীর সঙ্গে বড় কোনো ব্যাগ-বস্তা থাকলে গতিরোধ করে তল্লাশি করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহ হলে কাউকে কাউকে আটক করেছে পুলিশ।

অবশ্য তল্লাশি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল বলেছেন, ১৪ ডিসেম্বর (শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস), ১৬ ডিসেম্বর (মহান বিজয় দিবস) ও ২৫ ডিসেম্বরে (বড়দিন) যাতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে জন্য ঢাকার প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এতে কোনো যাত্রীর ঢাকায় আসা বন্ধ করেনি পুলিশ।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে টঙ্গী সেতু পার হলেই রাজধানীর আবদুল্লাহপুর। বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথ এটি। পুলিশের তল্লাশিচৌকি ছিল ঠিক টঙ্গী সেতুর মাথায়। ফলে ঢাকায় প্রবেশ করতে হলে তল্লাশিচৌকিটি উপেক্ষার সুযোগ নেই।

গতকাল দুপুরে দেখা যায়, টঙ্গী সেতুর সামনে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিন-চারজন পুলিশ সদস্য। বেলা সোয়া একটায় মোটরসাইকেলে রাজধানীর মিরপুরে যাচ্ছিলেন মো. পলাশ নামের একজন। সঙ্গে ছিল তাঁর কিশোর ছেলে মো. অনিক। টঙ্গী সেতুর সামনে আসতেই তাঁদের গতিরোধ করে পুলিশ। প্রথমে তাঁদের দুজনকেই তল্লাশি করা হয়। পরে ব্যাগ ও মুঠোফোনে থাকা বিভিন্ন ছবি, বার্তা যাচাই করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে করে তাঁদের আটকে রাখা হয়। পরে প্রায় আধা ঘণ্টা পর অনেক কাকুতিমিনতি করে ছাড়া পান তাঁরা।

জানতে চাইলে ওই যাত্রী বলেন, তাঁর বাসায় সন্ধ্যায় (গতকাল) জন্মদিনের উৎসব আছে। এ জন্য ছেলেকে নিয়ে টঙ্গীতে জন্মদিনের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। তিনি একজন সাধারণ শ্রমিক। কোনো দলের রাজনীতি করেন না। তারপরও পুলিশ হয়রানি করল।

মো. ইমন নামের আরেকজন মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন রাজধানীর ইস্কাটন রোড এলাকায়। টঙ্গী সেতুর কাছে এলে তাঁরও গতিরোধ করে পুলিশ। প্রথমে তাঁর তল্লাশি ও মুঠোফোন যাচাই করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে ড্রোন ও ড্রোন-সংশ্লিষ্ট কিছু যন্ত্রপাতি পায় পুলিশ। তাঁকে আটক করে টঙ্গী পূর্ব থানায় নেওয়া হয়।

থানায় যাওয়ার আগে কথা হলে মো. ইমন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ভিডিও তৈরির কাজ করেন। একটি ভিডিও তৈরির কাজে যাচ্ছিলেন রাজধানীর ইস্কাটন রোড এলাকায়। বারবার বলার পরেও পুলিশ কোনো কথা না শুনে তাঁকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে।

সড়কটিতে বেলা দুইটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে এমন অনেককে তল্লাশি করতে দেখা যায়। এর মধ্যে তল্লাশিতে পড়া প্রায় সবারই বক্তব্য, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। জরুরি কাজে যে যাঁর মতো ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশ তাঁদের পথ আটকে তল্লাশিসহ মুঠোফোনের ব্যক্তিগত তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ, ছবি ঘাঁটাঘাঁটি করে, যা হয়রানির শামিল।

তবে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তল্লাশির দায়িত্বে থাকা টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিলন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ যেন নাশকতা করতে না পারে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। এখানে কাউকে কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়নি।’

বাসেও তল্লাশি

বেলা একটার দিকে আমিনবাজার হাসপাতালের সামনের সড়কে যানবাহন বিশেষ করে মোটর গাড়ি, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়।

এ ছাড়া গাবতলী ব্রিজের কাছেও পুলিশ তল্লাশি করে। সেখানে পুলিশের সংখ্যা বেশি ছিল। এখানে বাসের ভেতরেও তল্লাশি করা হয়। কাউকে বেশি সন্দেহ হলে বাড়তি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অবশ্য সেখানকার পুলিশ সদস্যরা বলেছেন, এটি তাঁদের নিয়মিত তল্লাশি।