মূল্যস্ফীতি রোধ করতে গিয়ে মন্দা সৃষ্টির বাজেট: সিপিবি

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) লোগোছবি: সংগৃহীত

এবারের বাজেট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। সেই হিসাবে এটি একটি অনির্বাচিত সরকার প্রণীত বাজেট। স্বভাবতই এতে কোনো কাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে কিছু পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সে রকম কোনো চমক বাজেট দেখাতে পারেনি। এবারের বাজেট শুধু গতানুগতিক নয়, চমকহীনও বটে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তারা বলেছে, মূল্যস্ফীতি রোধ করতে গিয়ে মন্দা সৃষ্টির বাজেট হয়েছে এবার।

আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট–পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক যৌথ বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, এবারের বাজেট হয়েছে সংকোচনমূলক ও মন্দার বাজেট। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফের নির্দেশ অনুযায়ী ‘বেল্ট টাইট’ করে ব্যয় কমানোর জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোট বাজেটের আয়তন, মোট উন্নয়ন ব্যয়, মোট ঋণপ্রবাহ—এককথায় উৎপাদনশীল ব্যয় প্রসারের ওপর এই বাজেটে কোনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে আগামী দিনে প্রবৃদ্ধির যে টার্গেট ঠিক করা হয়েছে ৬ শতাংশের মতো, তা কার্যকর হবে না। বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণই বলে দেয়, এই প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে। এর ফলে এ কথা প্রায় নিশ্চিত যে আগামী দিনে প্রবৃদ্ধি কমবে, বেকারত্ব বাড়বে ও দারিদ্র্য বাড়বে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এবারের বাজেটে প্রত্যাশা ছিল লুটপাটকারীদের টাকা, পাচারকারীদের টাকা, ঋণখেলাপি ও কালোটাকার মালিকদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে বাজেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য বিমোচনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশাল পরিমাণ ব্যয় করতে সচেষ্ট হবে। বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য অতিধনীদের কাছ থেকে সম্পদ কর আদায় করে বাজেটকে আরও বৈষম্যবিরোধী ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ–নির্ভর করা হবে। কিন্তু এদিক দিয়ে সুদের বোঝা ও রাজস্ব তোলায় ব্যর্থতার জন্য বাজেট তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সামান্য শুল্ক বাড়ানো-কমানো ও নিম্ন আয়ের মানুষের করছাড় ও সামাজিক সুরক্ষা আওতায় কিছু সংস্কার ছাড়া বাকি সব জায়গায় কোনো পদচিহ্নই রাখতে পারেনি।

সিপিবি নেতারা বলেন, তদুপরি সুদের হার বেশি, ছোট–মাঝারি শিল্প, কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি; তেল-গ্যাস–বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি; আমদানি করা কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে এই বাজেটের নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও কৃষকের মধ্যে কোনো সুখবর নেই। এই বাজেট তাই গণতান্ত্রিকও নয়। এই বাজেট কি স্থিতিশীল রেখে আগামী বছর জুনের আগে নির্বাচিত সরকারের কাছে বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রচিত একটি বাজেট। যেসব পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার বড় বড় কথা অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, তা তাঁর বাজেটে শেষ পর্যন্ত আর স্থান পায়নি। এখন মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং টাকার মান কিছুটা স্থির করতে সরকার সক্ষম হয়েছে বটে, তবে এই বাজেটে সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে মন্দা, বেকারত্ব, বিদেশ–নির্ভরতার বিপদ ডেকে আনার সমূহ আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।