মির্জা ফখরুল বললেন
‘কালোটাকা’ সাদা করার সুযোগ দেওয়াকে মাছ শিকারের সঙ্গে তুলনা করে সংকট এড়ানো হচ্ছে
‘কালোটাকা’ সাদা বা বৈধ করার সুযোগ দেওয়াকে বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ ধরার সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে ‘ধূম্রজাল’ সৃষ্টির কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, যেখানে সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি—এই সংকট থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আজ দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি মন্তব্যের জবাবে এই বক্তব্য দেন। ‘স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও নিউক্লিয়াসের প্রধান সিরাজুল আলম খানের’ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। ‘বাঙালির জাগরণে করণীয় ও সিরাজুল আলম খান’ শীর্ষক এই আলোচনায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এতে সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। জেএসডির এই আলোচনা সভার শুরুতেই সিরাজুল আলম খানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্য ছিল মূলত চলমান ঘটনা ও জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সরকারের সমালোচনা। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বড়শিতে আধার দিয়ে মাছ শিকার, এটা হাস্যকর কথা। ওই মাছের টোপ কাদের দেওয়া হয়েছে? তাদের লোকেরাই তো দুর্নীতি করে বিপুল কালোটাকার মালিক হয়েছেন। তাঁদের কি ধরা হবে? এটা রাঘববোয়ালদের জন্য অবাধ লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশের পরদিন গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াকে বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ ধরার সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। শনিবার জেএসডির আলোচনা সভায় সেই বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল।
সিরাজুল আলম খান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, সিরাজুল ইসলাম খান ছিলেন তাত্ত্বিক নেতা। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চালিকা শক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর অবদান অস্বীকার করা যাবে না।
সভার সভাপতির বক্তব্যে আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশে এখন গোষ্ঠী ও ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবু তাদের ক্ষমতার তৃষ্ণা মিটছে না। বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, রাজনীতিতে সবকিছু নেতার নির্দেশে হয় না। অনেক সময় কর্মীরাই নেতাকে সৃষ্টি করেন। সিরাজুল আলম খান নেতা সৃষ্টি করেছেন।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান একা অবিসংবাদিত নেতা হতে পারতেন না, যদি সিরাজুল আলম খান তাঁর পাশে না থাকতেন।
সিরাজুল আলম খানের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সিরাজুল আলম খান ভবিষ্যতে বহুভাবে এই জনপদের মানুষের মধ্যে আলোচিত হবেন। ইতিহাস থেকে তাঁর অবদান মুছে ফেলা যাবে না।
আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব। আরও বক্তব্য দেন দলের সহসভাপতি আইনজীবী কে এম জাবির ও সিরাজ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ। অতিথি বক্তা ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আইনজীবীর হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জেএসডির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারী।