বিএনপির অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন গণতন্ত্র মঞ্চের

বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে যুক্ত করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার হতে চান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে নতুন কোনো মেরুকরণ হচ্ছে কি না, অথবা নির্বাচন–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা কী, সে সম্পর্কে দলটির কাছে জানতে চেয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এ বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টা থেকে পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মূলত দুই-তিনটি বিষয়ে আলোকপাত করেন। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে নতুন কোনো মেরুকরণ হচ্ছে কি না, তা জানার চেষ্টা করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। বিশেষ করে, যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে যুক্ত করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে পরিষ্কার হতে চান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। এই জোটের একজন নেতা প্রথম আলোকে  জানিয়েছেন, তাদের যুগপৎ আন্দোলনে এখনই যেন জামায়াতকে যুক্ত না করা হয়। আন্দোলনে বিজয়ের সম্ভাবনা দেখা দিলে তখন যে কেউ যুক্ত হতে পারে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এমন মত দিয়েছেন।  

বিগত আন্দোলন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমরা বিএনপির চিন্তাভাবনা জানতে চেয়েছি। তাঁরা দলীয়ভাবে আলোচনা করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি

অন্যদিকে বিএনপির একাধিক নেতাসহ যুগপৎ আন্দোলনে শরিক বিভিন্ন দল ও জোট ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে সরাসরি এ আন্দোলনের যুক্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী? সেটিও জানতে চান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেছেন, বিএনপি বা যুগপৎ আন্দোলনের কোনো কোনো শরিক দলের নেতাদের ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলন, বর্তমান ফ্যাসিবাদবিরোধী মূল আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এতে মূল আন্দোলনকে লক্ষ্যচ্যুত করবে এবং ক্ষমতাসীনদের আরও সুযোগ করে দেবে বলে তাঁরা মনে করেন। তা ছাড়া ভূরাজনীতি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ আন্দোলন কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত, সে প্রশ্নও তাঁদের রয়েছে। এ ছাড়া বিগত আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বিএনপি কোনো পর্যালোচনা বা মূল্যায়ন করেছে কি না, সে  সম্পর্কে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা আলোচনায় তোলেন। কারণ, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর ১৩ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এখন পর্যন্ত বিএনপি সে পর্যালোচনা করেনি।

ভূরাজনীতি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ আন্দোলন কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত, সে প্রশ্নও তাঁদের রয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছে, যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে নতুন কোনো মেরুকরণ হচ্ছে না। আর ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলনে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত। এ বিষয়ে বিএনপির দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিগত আন্দোলন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমরা বিএনপির চিন্তাভাবনা জানতে চেয়েছি। তাঁরা দলীয়ভাবে আলোচনা করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।’

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদসহ জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।