বাদ পড়ছেন স্বতন্ত্রদের অনেকে
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হচ্ছে সমর্থনসূচক সইয়ে গরমিলের কারণে। ৫-৯ ডিসেম্বর ইসিতে আপিল করা যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইয়ে তাঁদের অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমান সংসদ সদস্যদের কারও কারও মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থন-সংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তারা দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে কয়েকজনের সই যাচাই করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল হচ্ছে সমর্থনসূচক সইয়ে গরমিলের কারণে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হিসাবে, এবার সারা দেশে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৭১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত শুক্রবার থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন। আজ সোমবার ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হবে। এরপর সারা দেশে বাছাইয়ে কতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলো, তার চিত্র পাওয়া যাবে। অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫-৯ ডিসেম্বর ইসিতে আপিল করা যাবে। ১০-১৫ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি করবে ইসি। আপিলের মাধ্যমে অনেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন। ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের ১৯টি সংসদীয় আসনে মোট ১৭১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। গতকাল পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ৫৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। জমা দেওয়া ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়। তিনি পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলামের ভাই।
নেত্রকোনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন এবং নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়।
বাতিলের তালিকায় বর্তমান সংসদ সদস্যও
ঋণখেলাপি হওয়ায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও নোয়াখালী-৩ আসনের দলীয় প্রার্থী মামুনুর রশিদের (কিরন) মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। একই অভিযোগে নোয়াখালী-৪ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তিনি লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরীর মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবু জাফর বলেন, মাহী বি চৌধুরী একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার ছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
সিলেট-২ আসনে গণফোরামের বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নের কপি না থাকায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। কারণ, শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি জমা দেন।
চট্টগ্রাম-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উল্লেখ করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে দলীয় মনোনয়নের কপি জমা দিতে পারেননি।
নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
ঋণখেলাপি হওয়ায় কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এখানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের জাফর আলম। তিনি ও তাঁর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্ত্বেও হলফনামায় এ তথ্য গোপন করায় তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আসনে এখন সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে মুজিবুল হক পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মাহি, ডলি সায়ন্তনী ও হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল
রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চলচ্চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, তাঁর সমর্থক হিসেবে যে ভোটারদের সই জমা দিয়েছেন, তা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে গরমিল পাওয়া গেছে। তাই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত খেলাপি ঋণের কারণে পাবনা-২ আসনে বিএনএমের প্রার্থী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বগুড়া-৪ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হিরো আলম দলীয় প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মনোনয়নপত্রে দলের নাম উল্লেখ করেননি। হলফনামায় সই করেননি। হলফনামার সঙ্গে সম্পদ বিবরণীর ফরমও ছিল না। এসব নানা ত্রুটির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা।]