সাক্ষাৎকারে আসাদুজ্জামান খান

যারা হরতাল-অবরোধে ককটেল মেরে অভ্যস্ত, তারাই মেরেছে

রাজনৈতিক বিরোধীদের বাড়ি বেছে বেছে হামলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও হচ্ছে নেতা–কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে গুপ্ত হামলা। নির্বাচনের আগে এমন হামলা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোজিনা ইসলাম

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
ফাইল ছবি
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়া হয়েছে (গতকাল)। এর আগে প্রয়াত বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের বাসা লক্ষ্য করেও ককটেল ছোড়া হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসা লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা তো নতুন প্রবণতা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: দেখুন, আমাদের দলের কেউ বা যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই ককটেল মারতে যাননি। যারা হরতাল-অবরোধে ককটেল মেরে অভ্যস্ত, তারাই ককটেল মেরেছে। এটার নিশ্চয়ই নো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। তদন্ত ছাড়া আমরা এখনই বলতে পারব না কেন প্রবণতা তৈরি হয়েছে, কারা এই কাজ করছে। তবে বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় মুখোশ পরে গুপ্ত হামলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পিটিয়ে–কুপিয়ে জখম করে ফেলে যাওয়া হচ্ছে। একজন নিহত হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের জোরালো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না, তদন্ত হচ্ছে না। এটা কেন?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: মুখোশ পরে এভাবে হামলা হচ্ছে—এমন কোনো সংবাদ আমাদের কাছে আসেনি। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আমি শুধু এটা জানি, আমাদের যুবলীগের একজন নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা তারাই করছে, যারা নির্বাচন বর্জন করছে। এটা তারা সুপরিকল্পিতভাবেই করছে। উদ্দেশ্য, একটা অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করা। আমি নিশ্চিত যে ঘটনাগুলো তারাই ঘটাচ্ছে, যারা ২০১৪ সালে একই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে হরতাল–অবরোধ ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়েছে। কিন্তু এত মামলা, এত দ্রুত বিচার, এত সাজা দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আপনি কী বলবেন?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: আপনার প্রশ্নটা বোধ হয় ঠিক নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে ২১ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। ২৫ থেকে ৩০ হাজার মামলা করা হয়েছিল, যেগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইনে। এসব তো এ দেশের জনগণ ভোলেনি। মামলার পথ তো তারাই দেখিয়েছে।

প্রধান বিচারপতির বাড়িতে বা হাসপাতালে তো একজন ঢোকেনি। শত শত নেতা-কর্মী ঢুকেছে। বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়েছে। ক্যামেরাগুলো ভেঙে ফেলেছে। ভেবেছে ক্যামেরা থাকলে আমরা তাদের চিহ্নিত করতে পারব। কিন্তু আমরা ড্রোন রেখেছিলাম, সে জন্য ভিডিও ফুটেজ পাচ্ছি। আমরা ভিডিও ফুটেজে যাদের দেখতে পাচ্ছি, তাদের নামেই মামলা দিচ্ছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশ কি এভাবেই চলবে? ভবিষ্যৎ কী দেখেন?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: জনগণ এখন নির্বাচনমুখী। সবখানে উৎসব চলছে। শান্তির্পূণ নির্বাচন হবে। এখন সবাই জানে, বিএনপি একটি সুপরিচিত সন্ত্রাসী দল। শুধু আমরা নই, বিশ্বের সবাই এটা বলছে। তারা সব জেলায় বোমা হামলা করেছে, এখনো করছে। কিন্তু জনগণ এখন আর এসবে বিভ্রান্ত নয়। এখন সবাই নির্বাচনমুখী। ওরা এবং ওদের দোসর ছাড়া সবাই নির্বাচনে চলে আসছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এমন পরিস্থিতির মধ্যে কি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব? বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলে থাকলে এমন পরিস্থিতিতে কি নির্বাচনে যেত?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: আমরা কখনো নির্বাচন বর্জন করিনি। শুধু একবার পাতানো নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। যারা বোমাবাজি করে, তাদের কাছ থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করব। নির্বাচনের দিনও জনগণকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেব। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবে।