বিএনপির ৪৫ জনের বড় অংশই ভোটে থাকছেন

বিএনপি

বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও দলের যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের ভোটে থাকছেন। তবে প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতাদের একটা অংশ শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন, না কি প্রত্যাহার করবেন—এ নিয়ে তাঁদের অনেকে এখনো দোলাচলে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত সময় নিতে চাইছেন।

গতকাল শনিবার বিএনপির অন্তত ২৫ জন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে ও যোগাযোগ করে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁদের অনেকে বলছেন, ভোটে তাঁদের ভালো করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।

আরও পড়ুন

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সাবেক ও বর্তমান মিলে অন্তত ৪৫ জন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি গত সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিএনপি দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ বার্তা ইতিমধ্যে সাংগঠনিকভাবে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

যদিও দলীয় নির্দেশনা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র দাখিল করা প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচনে থাকার কথা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তবে নির্বাচনে আগ্রহীদের বেশির ভাগ নেতাই সাবেক। বর্তমানে কমিটিতে আছেন, এমন নেতার সংখ্যা খুব কম। এঁদের একজন সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আগে বিএনপির কমিটিতে ছিলাম, এখন কোনো পদে নেই। জনগণ চাচ্ছে আমি যেন নির্বাচন করি। তাই আমি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্করও এবার উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রতি সব সময় অনুগত এবং শ্রদ্ধাশীল। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।

আরও পড়ুন

রহস্যও রাখছেন কেউ কেউ

নাসিরনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আরেক প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওমরাও খান রহস্য রেখে চলছেন। তিনি বলেন, প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত দেখা যাক কী হয়।

একইভাবে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শামসুর রশিদ, ফুলপুরে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান ও হালুয়াঘাটে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বি‌এন‌পির সদস‌্য আবদুল হা‌মিদ প্রার্থী হয়েছেন। ধোবাউড়া উপজেলার শামসুর রশিদ বলেন, ‘আমি বিএনপির সাবেক নেতা। রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে আমাকে কোনো কমিটিতে রাখা হয়নি। নির্বাচনে না যেতে আমার ওপর বিএনপির কোনো চাপও নেই। আমি নির্বাচনে থাকব।’

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় বিএনপির চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা সফিক উদ্দিন।

আরও পড়ুন

তাঁদের মধ্যে গৌছ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনী মাঠে এখনো আছি। আমার অবস্থানও ভালো। তবে নির্বাচনে থাকব কি থাকব না, সে সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি।’

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সারওয়ার হোসেন ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক মাসুদুল আলম চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। দুজনই বলেছেন, তাঁরা দলের প্রতি অনুগত। নির্বাচন করা না করার বিষয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ নিচ্ছেন।

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মোহাম্মদ ফায়জুল কবির তালুকদার উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। দল থেকে নিষেধ থাকার পরও কেন প্রার্থী হয়েছেন, সেটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন, আমি নিজেও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম। পরিবার ও সাধারণ মানুষের আগ্রহের কারণে আমি নির্বাচন করছি।’

আরও পড়ুন

‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে’

ফরিদপুর সদর উপজেলায় বিএনপির দুই নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা হলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রউফ উন নবী ও যুবদলের সাবেক নেতা কে এম নাজমুল ইসলাম।

রউফ উন নবী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছি।’

আর নাজমুল ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে স্বতন্ত্রভাবে। আওয়ামী লীগও দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি, তাই আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছি। আমার এখন দলীয় কোনো পদ নাই, তাই দলের দিকে থেকে নির্বাচন করতে কোনো বাধাও নেই।’

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নগেন্দ্র চন্দ্র সরকার নির্বাচন করবেন। তিনি শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। নির্বাচনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের। তাঁদের দাবি, স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি এবং একাধিক প্রার্থিতার কারণে তাঁদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি।

আরও পড়ুন

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার কথা জানিয়েছেন, এমন বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে সাবেক বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন ও ভোলাহাটে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস প্রার্থী হয়েছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে তৎপর বিএনপি

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাদের সঙ্গে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কথা বলছি, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার নেতারাও কথা বলছেন, যাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ফেলেন। অনেকের সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করি, অধিকাংশই প্রত্যাহার করে নেবেন। আর না করলে দল তো নিশ্চয়ই একটা সিদ্ধান্ত নেবেই।’

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির একটি বিবৃতি দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলার নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাতে বিএনপি কেন ভোট বর্জন করছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই অবৈধ সরকারের নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার অবস্থান থেকে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।