দেশবাসী পাশে আছে, কাউকে পরোয়া করি না: প্রধানমন্ত্রী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাছবি: বাসস

জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের মাঝে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। আমি তাদের জন্য কাজ করি। ওই আস্থা ও বিশ্বাসই আমার একমাত্র সম্বল। এই সম্বল নিয়ে আমি চলি। এ জন্য কাউকে পরোয়া করি না। যতক্ষণ আমার দেশবাসী পাশে আছে, কাউকে পরোয়া করি না।’

বৃহস্পতিবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটি কাজ যদি প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে কী করতে পারেন? তবে জনগণ থেকে আমাকে দূরে সরাতে পারবেন না। আমার একটা শক্তি হচ্ছে জনগণ।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি, আমার বাবার সাথেও একই জিনিস হয়েছে। যতগুলো কাজ তিনি করে গেছেন... তারপরও তাঁর সমালোচনা। তাঁর বিরুদ্ধে নানা কথা। নানা লেখা। অনেক কিছু করে তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হয়েছে। যখন পারেনি, তখন হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও তো হত্যার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে।’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোগ করবেন সবাই আর কথায় কথায় ব্যঙ্গ করবেন আর প্রশ্ন তুলবেন...। প্রশ্ন তোলার আগে, নিজেরা কী করেছেন? কোন দল করেন, সেই দলের বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে অপকর্মগুলো—একটু চিন্তা করে নেবেন।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে কথায় কথায় আসে ঋণখেলাপি, এই সংস্কৃতি কখন শুরু হয়েছিল? ওই জিয়াউর রহমান যখন অবৈধ ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে, সেই সময় থেকে, যার ধারাবাহিকতা আমরা দেখেছি এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে। সেখান থেকে এখনো পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায়নি।’

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলে। গণতন্ত্রের প্রবক্তা হয়ে গেছে অনেকেই। আমার প্রশ্ন, যারা এখন গণতন্ত্র–গণতন্ত্র করে চিল্লায়, তাদের জন্ম কি গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়েছে? না, ওই রক্তাক্ত হাতে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই সেনা কর্মকর্তাদের পকেট থেকে তৈরি করা রাজনৈতিক দল। যারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সংস্কৃতি জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু।’

বিদ্যুৎ খাতে দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি

বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ বিধানের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা প্রশ্ন উঠান, বিশেষ আইন কেন করলাম। বিশেষ আইন এ জন্য করেছি, আমি তো ব্যক্তি খাতে সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ব্যক্তি খাতে উন্মুক্ত করে দিতে হলে আইন করেই করতে হবে। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা শুধু সরকার দিয়ে হবে না, ব্যক্তি খাত দিয়েই করতে হবে। ব্যক্তি খাত না দিলে কর্মসংস্থানও বাড়ে না। পৃথিবীর কোন দেশ আছে যেখানে ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হয়? একটা দেশ দেখান।’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনে কাউকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেসরকারি খাতে প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছিল সামিট। খুলনায় তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে দেরি করেছিল। যে কয়দিন দেরি করেছিল, প্রতিদিন ১০ হাজার ডলার করে জরিমানা দিতে হয়েছিল। সেই জরিমানা আমি আদায় করেছিলাম।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন গ্রামে লোডশেডিং না দিয়ে গুলশান, বারিধারা, বনানী—বড়লোকদের জায়গায় লোডশেডিং দিতে। তাঁরা সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। তাঁদের বাড়িতে (অভিজাত এলাকায়) লিফট, টেলিভিশন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আছে। তাঁদের একটু দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিলে বিদ্যুতের অনেক সাশ্রয় হয়। এখন থেকে সেটাই করা হবে।

‘লজ্জা পাচ্ছে কি না’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কেউ মেট্রোরেল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আজ প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার মানুষ মেট্রোরেল দিয়ে চলতে পারেন। এতে যাঁরা চড়ছেন, তাঁরা সুফল পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘যারা এটা (মেট্রোরেল) নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, তারা লজ্জা পাচ্ছে কি না, জানি না।’

রাস্তা নির্মাণে খরচ বেশি কেন? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশে রাস্তা বানাতে এত খরচ কেন? তাঁদের দেশের মাটি সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই। এ মাটি নরম। এখানে কোনো কিছু করতে গেলে, অর্থাৎ ওই যেনতেনভাবে করতে করতে গেলে দু-চার দিনের বেশি থাকে না। সেখানে সরকার আধুনিক প্রযুক্তিতে রাস্তা তৈরি করছে। যেখানে শক্ত মাটি, সেখানে অত খরচ হয় না। নরম মাটি বলেই খরচ বেশি।

শেষ হলো অধিবেশন

বৃহস্পতিবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ হয়। অধিবেশন সমাপ্তিসংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২ মে শুরু হওয়া এই অধিবেশনে ছয় কার্যদিবস চলে। এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য ৩৮টি প্রশ্ন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে তিনি ১৫টির উত্তর দিয়েছেন। অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য প্রশ্ন জমা পড়েছিল ৯০২টি। এর মধ্যে জবাব পাওয়া গেছে ৩৬৪টির।

৭১ বিধির আওতায় নোটিশ জমা পড়ে ২৪২টি। এর মধ্যে গৃহীত হয় ৬টি। অধিবেশনে ৫টি বিল উত্থাপিত হয়। পাস হয় একটি বিল।