জামানত হারিয়েছেন একাদশ সংসদের ৯ জন সংসদ সদস্য

  • আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করা একাদশ সংসদের তিনজন সংসদ সদস্য এবার জামানত হারিয়েছেন।

  • একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির তিনজন এবার ভোটে জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী ছিল না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনছবি: প্রথম আলো

একাদশ জাতীয় সংসদের ৫৭ জন সদস্য এবার নির্বাচনে হেরেছেন। তাঁদের মধ্যে নয়জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। বাকি ছয়জনের তিনজন জাতীয় পার্টির, একজন বিকল্পধারা বাংলাদেশের, একজন গণফোরামের ও আরেকজন তরীকত ফেডারেশনের।

অবশ্য তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে নৌকার প্রার্থীকে (চট্টগ্রাম-২ আসন) সমর্থন জানিয়ে ভোট থেকে সরে যান। তবে ব্যালট পেপারে তাঁর দলের প্রতীক ফুলের মালা থেকে যায়। পরে ভোট গ্রহণ শেষে দেখা যায়, ফুলের মালা প্রতীকে ২৩১ ভোট পড়েছে। এই আসনে জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক তরীকত ফেডারেশন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সমঝোতার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম-২ আসনটি তরীকতকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে এবার এই আসন নিয়ে দুই দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি।

জামানত ২০ হাজার টাকা। কোনো প্রার্থী কোনো আসনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগেরও কম পেলে জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়।

৭ জানুয়ারি ভোটের দিন দুপুরে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৯২২ ভোট। এ আসনে ৭৮ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাঁকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছে। তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

যশোর-৪ আসনে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রণজিত কুমার রায়। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। রণজিত কুমার রায় ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৫৮৬ ভোট। এই আসনে ১ লাখ ৮১ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক। তিনি অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারের শুরুর পর থেকেই রণজিত কুমারের পক্ষে তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না। ভোটের তিন–চার দিন আগে নির্বাচন থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানোরও গুঞ্জন উঠেছিল।

গাইবান্ধা-৪ আসনে একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে তিনি ২৭ হাজার ৪৫০ ভোট পেয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করে আবুল কালাম আজাদকে। তিনি ২ লাখ ১ হাজার ১৭১ ভোট পেয়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, ভোটের প্রচারের শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। অন্যদিকে সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ওপর নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কম ছিল। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও তাঁর উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নওগাঁ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ১৯০ ভোট। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে নাহিদ মোর্শেদকে। ভোটে তিনিও জিততে পারেননি। এখানে জিতেছেন আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ব্রহানী সুলতান। তিনি পেয়েছেন ৮৫ হাজার ১৮০ ভোট। ব্রহানী সুলতান নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক।

একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের মধ্যে বরিশাল–৬ আসনে নাসরিন জাহান ৯ হাজার ১৮৮ ভোট, নীলফামারী–৩ রানা মোহাম্মদ সোহেল ১০ হাজার ২২৮ ভোট ও বগুড়া–৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার ১০ হাজার ৫৭৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে নীলফামারী-৩ ও বগুড়া-৩ আসন দুটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় ছাড় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। দুটি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জ–১ আসনে বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরীও জামানত হারিয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৩ ভোট। এই আসনে জিতেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ, তিনি পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বলছেন, নৌকার প্রার্থী ছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। মূল লড়াই হয়েছে তাঁদের মধ্যে। একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে তৃতীয় হয়েছেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়। কোনো প্রার্থী কোনো আসনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগেরও কম পেলে জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়।