কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এখন আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নেই, বরং রাজাকারদের প্রেতাত্মারা আছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি দাবি করেন, আন্দোলনকারীদের ‘পাশবিক ও দানবীয়’ আক্রমণে ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে এবং জবাব দেওয়া হবে। একটি ঘটনাও জবাব ছাড়া যাবে না। রাজাকারদের ফাঁদে পড়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল হয়।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে সাদ্দাম এ কথাগুলো বলেন। ছাত্রলীগের এই কর্মসূচির শিরোনাম ছিল ‘বাঙালির মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারী রাজাকারদের প্রতি সাফাই, আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতা-কর্মীদের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ’।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতাকে বিকৃত করা হয়েছে। এই লজ্জা আমরা কোথায় রাখি? আমরা ধিক্কার জানাই বিকৃত করে প্রচার করার। আমরা বলতে চাই, ছাত্রলীগের ইস্পাতদৃঢ় লড়াইয়ের ইতিহাস ভুলে যাবেন না। আমরা অনেক বিনয়ের পরিচয় দিচ্ছি, সীমা লঙ্ঘন করছেন।’ শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেন।
ছাত্রলীগ নেতাদের গুলি করল কে
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই গুলিগুলো কারা করেছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ হলের ছাদ থেকে ফায়ার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হওয়ার পরও দেশের স্বার্থে ছাত্রলীগ উসকানি এড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করেছে। ৮-৯ দিন বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হয়েছে। কোথাও একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগ বলেছে, কোটার বিষয়টির যৌক্তিক সংস্কার হোক আইনি ও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়। সরকার বলেছে, তারা আন্তরিক। তারপরও কিসের জন্য লাগামছাড়া কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে? শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করার চেষ্টা করলে নেতা-কর্মীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আন্দোলনে এখন সাধারণ শিক্ষার্থী নেই
গতকাল সোমবারের সংঘর্ষের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, গতকাল বেলা তিনটায় রাজু ভাস্কর্যে তাঁদের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু ভোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন দুপুর ১২টায় এখানে কর্মসূচি দেন। মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগ অপেক্ষা করেছে তাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার। কিন্তু তারা রাজু ভাস্কর্য ছাড়েনি। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাদের হলের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এরপরও ছাত্রলীগ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চেয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি প্রতিরোধ করতে চেয়েছে। আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মে এখন আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নেই। তারা ‘আমি রাজাকারের প্রেতাত্মা।’
সমাবেশে সাদ্দামের আগে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের মহানগরের নেতারাও। সমাবেশের বক্তব্য পর্ব শেষেও ছাত্রলীগ রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছে। নেতা-কর্মীদের হাতে আছে লাঠিসোঁটা, কাঠ, হকিস্টিক ও লোহার পাইপ। অনেকের মাথায় হেলমেটও আছে।