কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে গোলচত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন ও বর্ধিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে গোলচত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ছয়টি উপপক্ষ এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় ‘এক দফা এক দাবি, বর্ধিত কমিটি, ‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন, করতে হবে করতে হবে, ‘আর নাই প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়।

আজ রোববার বেলা আড়াইটায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের কলা ঝুপড়ি এলাকা থেকে গোলচত্বরে জড়ো হন। ছাত্রলীগের বিক্ষোভের কারণে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বেলা সাড়ে তিনটায় তালা খুলে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে একই দাবিতে গত ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন, গত বৃহস্পতিবার গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও গত মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন।

শাখা ছাত্রলীগের ছয়টি উপপক্ষ এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। সেগুলো হলো ভার্সিটি এক্সপ্রেস, বাংলার মুখ, এপিটাফ, রেড সিগন্যাল, কনকর্ড ও উল্কা। এসব উপপক্ষের নেতা-কর্মী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

ভার্সিটি এক্সপ্রেস উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে কমিটি বর্ধিত করার দাবি জানাই। কিন্তু শীর্ষ নেতারা আমলে নেননি। তাই আন্দোলন ধীরে ধীরে কঠোর করছি। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বাংলার মুখ উপপক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু বকর তোহা, রেড সিগন্যাল উপপক্ষের নেতা ও সহসভাপতি রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে নিয়মিত যুক্ত ছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে অনিয়মিত কর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে বিবাহিত ও চাকরিজীবীরাও রয়েছেন, যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। তাই বর্তমান এই কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে এবং ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মীদের পদ দিয়ে কমিটি বর্ধিত করতে হবে।

বিক্ষোভের আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের কলা ঝুপড়ি এলাকা থেকে গোলচত্বরে জড়ো হন
ছবি: প্রথম আলো

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই থেকে তিন হাজার কর্মীর সবাইকে তো কমিটিতে পদ দেওয়া সম্ভব নয়। সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা আছে। হল কমিটি দিয়ে পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়ে সুরাহা করা হবে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি বর্ধিত করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের জানানো হয়েছে। কমিটির জন্য বিক্ষোভ ও অবরোধের মতো কাণ্ড ঘটানো দুঃখজনক। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের থেকে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। এ ছাড়া বিবাহিত বা চাকরিজীবী যদি কেউ কমিটিতে থাকেন, তাহলে বিষয়টি সংগঠনের দপ্তর সেলে জানালেই হয়। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা এমন কিছু করেননি।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি। ফোনে না পেয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তাঁরা।

গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৪টি হলের প্রায় ৩০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন। এদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে দিয়ে অবরোধের ডাক দেন তাঁরা। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা নতুন কমিটির দাবি জানান। এ অচলাবস্থা চলে ২ আগস্ট পর্যন্ত। এ কারণে ৯টি বিভাগের ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই দুই পক্ষের মধ্যে আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) মহিবুল হাসান, বাকি নয়টি উপপক্ষ আ জ ম নাছিরের অনুসারী। তবে দুই নেতাই বিভিন্ন সময় বলেছেন, চবি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তাঁদের কোনো পক্ষই নেই।