মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে যা নয়, তা–ই বলা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সমাবেশে বক্তব্য দেন। নয়াপল্টন, ঢাকা, ২ অক্টোবর
ছবি: আশরাফুল আলম

কূটনৈতিক শিষ্টাচার উপেক্ষা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে যা নয়, তা–ই বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব কথাবার্তাকে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন।

গত কয়েক দিন ধরে ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে সমালোচনামূলক কথাবার্তা বলছেন। এ প্রসঙ্গ টেনে সমাবেশে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।

ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে সব কূটনৈতিক শিষ্টাচার উপেক্ষা করে তাঁর বিরুদ্ধে যা নয়, তা–ই বলা হচ্ছ। তাদের যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আছে, তারা বিভিন্ন রকম ফিচার তৈরি করছে। তিনি বলেন, ‘এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন, যে দেশটাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস পণ্য যায়, সেই দেশের সঙ্গে তারা সমস্যা তৈরি করছে।’

সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়
বর্তমান গণবিরোধী সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, চিকিৎসার কোনো সুযোগ না দিয়ে, মিথ্যা-প্রতারণা করে, জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করতে চায় সরকার। যে কথাগুলো ওনারা (ক্ষমতাসীনেরা) বলছে, সে কথাগুলো বলার একটাই উদ্দেশ্য, এরা আসলেই ভিতু। এরা জানে, খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, যদি আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তাহলে বেগম জিয়ার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে, তাদের তকতে–তাউস (সিংহাসন) ধ্বংস হয়ে যাবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন রকমের আইনকানুন দেখানো হচ্ছে। যখন (কারাবন্দী থাকার সময়) আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কানের সমস্যা হয়েছিল, তখন তো আপনি প্যারোল নিয়ে ঠিকই আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন। আজকে যখন খালেদা জিয়ার জীবন-মরণের সমস্যা, তখন এই ব্যবস্থাটা করতে আপনাদের এত আপত্তি কেন?’

টার্মিনাল, টানেল খেয়ে স্বর্গে যাব?
সরকারের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের এই মেগা প্রজেক্টের মেগা চুরির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, আমাদের সময়ে গান-টান দিয়ে মিছিল হতো। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে, তেলের দাম বেড়ে গেলে মিছিলে গান গাওয়া হতো, ২০ টাকায় তেল খেয়ে আমি স্বর্গে যাব গো। টানেল বানাচ্ছেন, টার্মিনাল বানাচ্ছেন, উড়াল সেতু বানাচ্ছেন। এখন কী বলব, উড়াল সেতু খেয়ে স্বর্গে যাব গো, টানেল খেয়ে স্বর্গে যাব গো, উড়াল সেতু খেয়ে স্বর্গে যাব গো।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষ ধান বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পায় না। সারের দাম তিন গুণ বেড়েছে। কৃষকেরা এখন রিকশা-ভ্যান চালান। তাঁদের বেঁচে থাকাই এখন কঠিন হয়ে উঠেছে। শ্রমিকেরা শ্রমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন না। মেধাবীরা চাকরি পান না।

এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন
সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘শুধু বিএনপি নয়, সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। সবাই একযোগে বলছে, আর কোনো কথা শুনতে চাই না, আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’

সরকারকে আবারও সতর্ক করে দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এখনো সময় আছে, মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা, শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন প্রমুখ।