১৩ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের রেকি করতে এসেছিলেন জিয়া: মেয়র তাপস

শেখ ফজলে নূর তাপস
ফাইল ছবি

বাবা শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সাক্ষাতের ছলে ১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের রেকি করতে এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ মন্তব্য করেন। গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ এই সভার আয়োজন করে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট জিয়াউর রহমান আমাদের বাসায় এসেছিলেন। সেদিন দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি বাবার সঙ্গে দেখা করে গেছেন। সেদিন তাঁর আমাদের বাসায় আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না তা জানা। আমরা কোনো কিছু জানি নাকি? বাসার পরিস্থিতি কী, আশপাশের অবস্থা কী? এসব রেকি করার জন্যই সেদিন জিয়াউর রহমান সশরীর আমাদের বাসায় এসেছিলেন।’

নেপথ্য থেকে শুধু হত্যাকাণ্ড ঘটানোয় নয়, খুনিদের রক্ষা করাও জিয়াউর রহমানের মূল ভূমিকা ছিল উল্লেখ করে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মূল কার্যক্রমই ছিল নেপথ্য থেকে এই হত্যাকাণ্ড সামাল দেওয়া। সেই খুনিদের বাঁচানো। কেউ যেন সেই খুনিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিতে পারে এবং তাদের যে মূল উদ্দেশ্য, তা যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করা। সেটাই তিনি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন।’

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড–পরবর্তী কর্মকাণ্ড ও তৎপরতার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকাকে প্রমাণ করে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পরে যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডকে বাধা দিতে চেয়েছিল, প্রতিঘাত করতে চেয়েছিলেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেই কর্নেল নুরুদ্দীন ও শাফায়াত জামিলকে আটক করে কর্নেল রশিদ সেদিন জিয়াউর রহমানের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। খুনের পরবর্তী ঘটনা আরও প্রমাণ করে জিয়াউর রহমান তাঁদের আস্থার জায়গা ছিল। সাধারণ মানুষের কিংবা সেনাবাহিনীর মধ্যকার যেকোনো ধরনের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করার প্রচেষ্টা সেদিন জিয়াউর রহমান সামাল দিয়েছিলেন। এসব তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করে যে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
মেয়র বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসেই খুনি কর্নেল রশিদকে গো অ্যাহেড নির্দেশের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা, সরকারের বিরুদ্ধে ক্যু করা এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিরা আজও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি জামায়াত-বিএনপির সব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে সবাইকে শপথ নিতে হবে।’

ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের বিচার করার যে বক্তব্য বিএনপি মহাসচিব রাখছেন, তার জবাবে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অপকর্মের জন্য আপনাদের নেতা তারেক জিয়ার বিচার হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও রাজাকারদের বিচার করেছেন। তেমনি আপনাদের সব অন্যায়েরও বিচার হবে।’

আগামী নির্বাচনে আসবে না বলে বিএনপির হুঁশিয়ারির জবাবে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ না নিয়ে হরতাল, জ্বালাও–পোড়াও আর করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করবে।’

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদ উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী।