যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিএনপির চাওয়া পূরণ হয়নি: ওবায়দুল কাদের

‘আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আজ মঙ্গলবার দুপুরেছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিএনপির চাওয়া পূরণ হয়নি, এ মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা চায়, ওয়াশিংটনের কাছে যা চায়, সেই চাওয়াটা তারা পায়নি। তারা শুনতে চেয়েছিল, সরকারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আসবে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারের ভাঙা রেকর্ড শুনতে শুনতে কান ঝাঁজরা হয়ে গেছে। মিথ্যাচারের ধারাবাহিকতায় তাদের গলার জোর একটু কমে গেছে। তবে তাদের মুখে বিষ আরও উগ্র হয়ে গেছে।’

বিএনপি তাদের নেতিবাচক মানসিকতা সরকারের ওপর চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থতা, হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচনে আসেনি তারা। এটিও তাদের ব্যর্থতা।

‘প্রভুর দাসত্ব আমরা মানি না’

যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে গতকাল ফিরে গেছে। এ সফরে তারা সরকারের কয়েক মন্ত্রীর পাশাপাশি বিএনপির নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের এ সফরের বিষয়েও সাংবাদিকেরা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমেরিকার প্রতিনিধিদল ফিরে গিয়ে কী বলবে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কোনো প্রয়োজন কি আমাদের আছে? আমরা বুঝব কী বলে গেছেন। আবার আমেরিকায় গিয়ে কী বলবেন, সেসব নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন তো আমাদের নেই।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেখুন, একটা কথা বলে রাখি, আমরা বিদেশি বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই। বন্ধুর পরিবর্তে যারা প্রভুর ভূমিকায় আসতে চান, সে প্রভুর দাসত্ব আমরা মানি না। এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি।’

বিএনপির সঙ্গে মার্কিন দলের বৈঠকের বিষয়

বিএনপির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে করেনি, এটাকে কোনো সংকট মনে করছেন কি না—এমন প্রশ্নও এসেছিল সংবাদ সম্মেলনে। এর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো সংকটের কথা বলেনি, কেন বলবে? নির্বাচনের আগে একটা পরিস্থিতি ছিল। তখন সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করার দরকার ছিল।

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘এখন তারা মূলত এসেছে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোড়দার করতে। এখন বিএনপির সঙ্গে একটা বৈঠক করেছে, পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের মতামত, পর্যালোচনা কী, সেটা জানাটা যৌক্তিক মনে করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। সে কারণে বৈঠক করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা তো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছে, তিনিও তো আমাদের দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টার সঙ্গেও কথা বলেছে। কাজেই এখানে কোনো ঘাটতি আছে, এটা আমরা মনে করছি না।’

‘বাংলাদেশ ঋণখেলাপি হবে না’

গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে, এ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ব সংকটের কারণে সারা দুনিয়াতেই এখন অর্থসংকট প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় ঋণ আগের তুলনায় বাড়তে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের এযাবৎ ঋণখেলাপি হওয়ার কোনো রেকর্ড রাখেনি। আমরা সে ব্যবস্থা করছি। ঋণখেলাপি হবে না, আমরা এটুকু বলতে পারি।’

‘দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় আছে’

দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত উসকানি, এত আন্দোলন যে বাংলাদেশ উত্তাল সাগর হয়ে যাবে, এসবের পর ওই পিকনিক পার্টি সমাবেশের নামে যা করেছে, সেখানেও জনগণ প্রলুব্ধ হয়নি। প্ররোচিতও হয়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের জনগণ সারা বিশ্বের খবর রাখে। সারা বিশ্বের সব খবর নিয়ে গ্রামে চায়ের দোকানে রীতিমতো গবেষণা হয়। মানুষ বোঝে, এখানে সরকারের দোষ নেই। বিশ্বে যে সংকট দ্রব্যমূল্য নিয়ে, তা বাংলাদেশের একার নয়। সারা দুনিয়ায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। পৃথিবীর একটা দেশ দেখান, যেখানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তবে আমাদের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা এখনো আছে। আমরা আশা করি, সামনের রমজানেও জিনিসপত্র পর্যাপ্ত থাকবে।’

গরুর মাংসের দাম বাড়ার প্রসঙ্গ

চাঁদাবাজির কারণে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজি একটা বিষয় অবশ্যই আছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠিন বক্তব্য রেখেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘একটা বিষয় শুরু হলে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে, এমন তো ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলার পর সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। যাঁর যে দায়িত্ব আছে, পালন করার জন্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করার জন্য সবাই তৎপরতা শুরু করেছেন। অর্থনীতিতে যখন সংকট হবে, তখন দ্রব্যমূল্য, বাজার ওঠানামা করে; এটা বাজারের ধর্ম। অপেক্ষা করেন, আপনাদের তো না খাইয়ে রাখেনি, দেশের মানুষ খেতে পারছে। একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি। দেশের মানুষ অনেক ভালো আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, সাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, উপপ্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।