উপজেলা নির্বাচনে ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় সংসদ সদস্যরা

চট্টগ্রামে বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ভোটের মাঠে কলকাঠি নাড়ছেন। তাঁরা নিজেদের ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান–মেম্বারদেরও নির্দেশনা দিচ্ছেন।

নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

সংসদ সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে না থাকলেও বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ভেতরে-ভেতরে কলকাঠি নাড়ছেন। এমনকি তাঁরা নিজেদের ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান–মেম্বারদের ফোনে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, মিরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিজেদের অনুগত প্রার্থী রয়েছেন। সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যে মাঠে নেই। কিন্তু তাঁরা নিজ নিজ অনুগত প্রার্থীকে জেতাতে তাঁদের অনুসারীদের ভোটের মাঠে নামিয়েছেন।

৮ মে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ ও মিরসরাই উপজেলায় এবং ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে চার উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলায়।

ভোট হতে যাওয়া চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। যদিও এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রার্থীদের দলীয় প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টা রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা একই দলের বিভিন্ন প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

হাটহাজারীর লড়াই ত্রিমুখী

হাটহাজারীতে ত্রিমুখী লড়াই হতে যাচ্ছে। এই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলম এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ইউনুছ গনি চৌধুরী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হাসান চৌধুরী। রাশেদুল আলম গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়েছিলেন। তাই এবার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ গনি চৌধুরী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অনুসারী বলে পরিচিত। তিনি সংসদ সদস্যের আনুকূল্য পাচ্ছেন বলে অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন।

ইউনুছ গনি চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী সোহরাব হাসান চৌধুরী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফলে হাটহাজারীর ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় দলের কমিটিতে তাঁর প্রভাব রয়েছে।

অন্যদিকে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলমেরও সাংগঠনিক প্রভাব রয়েছে। তিনি প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইউনুছ গনির পক্ষে প্রভাব বিস্তার করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘এমপি সাহেব আমার বিরুদ্ধে’, অভিযোগ এক প্রার্থীর

সন্দ্বীপ উপজেলায়ও সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুদ্দিন মিশন এক বছর আগে উপনির্বাচনের মাধ্যমে ওই চেয়ারে বসেছিলেন। তখন সংসদ সদস্য তাঁকে সমর্থন দিয়েছিলেন।

মাঈনুদ্দিন মিশনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন মগধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই নেতা নিজেকে সংসদ সদস্যের প্রার্থী হিসেবে দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তবে মাঈনুদ্দিন মিশন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপি সাহেব (মাহফুজুর রহমান) আমার বিরুদ্ধে। গতবার আমার পক্ষে ছিলেন। কেন তিনি বিরুদ্ধে গেলেন, তা–ও জানি না। তিনি ফোনে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান–মেম্বারদের বলে দিচ্ছেন।’

সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, গতবার মাঈনুদ্দিন মিশন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। দলের সবাই তাঁর পক্ষ নিয়েছিলেন। এবার তো প্রতীক ছাড়া নির্বাচন। এখানে কারও পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই।

সন্দ্বীপে চেয়ারম্যান পদে অপর তিন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দিন জামসেদ, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ ও শেখ মুহাম্মদ জুয়েল।

সীতাকুণ্ডেও প্রভাব

সীতাকুণ্ডে আরিফুল আলম চৌধুরীকে জেতাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম আল মামুন নগরের একটি ক্লাবে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরিফুল আলম ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এবার উপজেলায় তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ।

মহিউদ্দিনের অভিযোগ, ‘এমপি সাহেব নিজে আরিফুল আলমের পক্ষে প্রভাব বিস্তার করছেন। সংসদ নির্বাচনে ব্যবহৃত দলের প্রার্থীর প্রচারণার ক্যাম্পগুলোই ওই প্রার্থীর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য এস এম আল মামুন বলেন, ‘এগুলো ভিত্তিহীন কথা। আমি কারও পক্ষে কোনো কাজ করিনি।’

আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

মিরসরাই উপজেলায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও একই কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এনায়েত হোসেনের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আতাউর রহমান। তবে এবার তিনি মোশাররফ হোসেন কিংবা তাঁর ছেলে সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের সমর্থন পাচ্ছেন না। তাঁরা গোপনে আরেক প্রার্থী এনায়েত হোসেনকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানকে ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিরসরাইয়ে চেয়ারম্যান পদে অপর তিন প্রার্থীও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। তাঁরা হলেন ফেরদৌস হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তফা ও উত্তম কুমার শর্মা।

ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি ও একই কমিটির সদস্য বখতেয়ার সাঈদ। দুজনেই স্থানীয় সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ারের অনুসারী।