নেতা-কর্মীদের আটকের প্রতিবাদে ‘স্বেচ্ছা কারাবরণ’ কর্মসূচি গণ অধিকারের

ছাত্র অধিকার পরিষদের ডাকা বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্র অধিকার পরিষদের কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী রাজধানীর শাহবাগ থানায় আটক আছেন। তাঁদের আটকের প্রতিবাদে আজ শনিবার 'স্বেচ্ছা কারাবরণ' কর্মসূচির ডাক দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গণ অধিকার পরিষদ জানিয়েছে, শনিবার বেলা ১১টায় পল্টন থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় যাবেন নুরুলের দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।

এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যান ছাত্র অধিকারের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে পুলিশ এই নেতা-কর্মীদের আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্মরণসভার আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ।

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা স্মরণসভায় হামলা করেন। একপর্যায়ে তাঁদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন। হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কমপক্ষে ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাঁদের পেটায় ছাত্রলীগ। বিকেলে হাসপাতাল থেকে পরিষদের কমপক্ষে ২০ নেতা-কর্মীকে আটক করে শাহবাগ থানা-পুলিশ।

স্মরণসভায় হামলার সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন। রাতে তিনি পরিষদের ১৮ নেতা-কর্মীর নামে শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন করেন। এতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেনকে এক নম্বর এবং সাধারণ সম্পাদক আকরাম হুসাইনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। শাহবাগ থানায় আটকদের মধ্যে আখতারও রয়েছেন।

গণ অধিকার পরিষদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। প্রতিবাদে শনিবার বেলা ১১টায় পল্টন থেকে ‘স্বেচ্ছা কারাবরণ’ কর্মসূচির সূচনা হবে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে আমরা শাহবাগ থানায় যাব। গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক সর্বস্তরের মানুষকে এতে অংশ নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। তাঁরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে তিনজন পলাতক।

আরও পড়ুন

স্মরণসভায় হামলার নিন্দা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের

এদিকে, আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়েছে একাধিক ছাত্রসংগঠন। তারা এই হামলার ঘটনাকে নৃশংস ও বর্বরোচিত বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাকে ‘নৃশংস’ বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এক বিবৃতিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কখনোই এ দেশে বিরোধী মত সহ্য করতে পারেনি। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।

স্মরণসভায় ছাত্রলীগের হামলাকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশন। এক বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও প্রশাসন নীরব থেকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে মদদ দিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আবরারের মৃত্যু ছাত্রলীগের অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সব মানুষকে এক করে দিয়েছে। তাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের গুম-খুনের ইতিহাস লুকিয়ে রাখতে আবরারে নাম মুছে দিতে চায়।

আরও পড়ুন

ছাত্র অধিকার পরিষদের ওপর ছাত্রলীগের হামলাকে ‘ন্যক্কারজনক’ মন্তব্য করে এর নিন্দা করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ ও সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, প্রশাসনের অব্যাহত নির্লিপ্ততার কারণেই আজ ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।