ইউনূস সাহেব ধরা পড়ে গেছেন, আসল এজেন্ডা চট্টগ্রাম বন্দর: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সিপিবির জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান; ১৪ নভেম্বর ২০২৫ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দেশে তলেতলে অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ‘ইউনূস সাহেব (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) ধরা পড়ে গেছেন। (তাঁর) আসল এজেন্ডা হলো চট্টগ্রাম বন্দর; উনি গোপনে আমেরিকান কোম্পানির কাছে এটা লিজ দিয়ে দিচ্ছেন, পশ্চিমা কোম্পানির কাছে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির জাতীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন দলটির বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র সাম্প্রদায়িক ডানপন্থী গোষ্ঠীর আস্ফালন রুখতে গণমানুষের ঐক্য–সংগ্রাম অগ্রসর করা এবং বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গঠন করার আহ্বান জানিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করে সিপিবি। সমাবেশ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

পশ্চিমা কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এটা লিজ দিয়ে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠানোর নামে; মানবিক করিডর করার চেষ্টা করছে। আমেরিকার সেনাবাহিনী যাতে এখানে এসে ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে পারে, সেই চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর উদ্দেশে আমি বলতে চাই— হুঁশিয়ার থাকবেন। বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যে চেষ্টা হচ্ছে, সেটাকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে।’

বৈষম্য দূর করতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান হলেও কিছুই করা হয়নি মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বুকের রক্ত দিয়ে পাকিস্তানের গোলামি থেকে মুক্ত হয়েছি। নতুন করে যদি কেউ আমাদেরকে ভারত কিংবা আমেরিকার গোলামির শিকলে বাঁধতে চায়, তাহলে মানুষ আবার জেগে উঠবে। মুক্তির সংগ্রাম ধ্বংস করার কোনো চক্রান্ত বরদাশত করা হবে না।’

দেশে বহুদিন ধরে আপদ আর বিপদের রাজত্ব চলছে মন্তব্য করে সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেন, ‘একবার এ শোষণ করে, আরেকবার ও শোষণ করে। লুটপাটকারীর দল। নৌকা, ধানের শীষ; ধানের শীষের সঙ্গে আবার জামায়াতে ইসলাম যুক্ত হয়েছে।’

সিপিবির জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান; ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এখন হাসিনার ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার পতনের পর, সেই দ্বিদলীয় ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে। এখানে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ যদি মনে করেন, হাসিনা সরকারের মতোই আরেকটা নবসংস্করণ আমাদের দেশের সমস্যার সমাধান করবে, তাঁরা আহম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। ওইটা বিএনপিকে দিয়েও হওয়া সম্ভব না, এনসিপিকে দিয়েও সম্ভব না বা অন্য কোনো দল দিয়েও হবে না। যেইটা দরকার, সেটা হলো বিকল্প। সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়ে আরেকটা নতুন অবস্থায় দেশকে নিয়ে যেতে হবে।’

সমাবেশে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সমাজ বিপ্লবীদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জন্য এখন প্রয়োজন—যাঁরা ব্যক্তিমালিকানা উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাঁদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা। এবারকার যুক্তফ্রন্ট হবে বিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট, সমস্ত বামপন্থীদের ফ্রন্ট। আমি মনে করি, সেই ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে হবে কমিউনিস্ট পার্টিকে। তাদের আওয়াজ তুলতে হবে—সমাজবিপ্লবীরা এক হও। আশা করি, কমিউনিস্ট পার্টির এ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান হয়েছিল, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী ইউনূস সরকার তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বেহাত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার নারীদের, সংখ্যালঘু মানুষের কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়নি। গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের দাবিদার একটি গোষ্ঠী নতুন করে লুটপাট ও দখলদারির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।’

নির্বাচন কমিশন ঘেরাওসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি

সমাবেশ সভাপতির বক্তব্যে সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণার দাবি জানান। নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা–উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

পাশাপাশি লালদিয়া টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তরে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১৬ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন সিপিবির সভাপতি।

এ ছাড়া সমাবেশ থেকে ২৮ নভেম্বর ঢাকায় নারীদের রাজনৈতিক কনভেনশন এবং ২৯ নভেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দলসমূহের উদ্যোগে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ২৪-এর–গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির জাতীয় কনভেনশন আয়োজনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব ও গাউছিয়া মার্কেট এলাকার সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাগীব আহসান মুন্না, এস এ রশীদ, আমিনুল ফরিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন ও দিবালোক সিংহ।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রধান উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন সুরেশ্বর দরবার শরিফের পীর শাহ সুফি হাসান শাহ দীপু নুরী সুরেশ্বরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন ও বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণলাল।

সমাবেশ পরিচালনা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক ও জলি তালুকদার। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ হয়ে বাটা সিগন্যাল, সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা কলেজ, গাউছিয়া মার্কেট থেকে ঘুরে আবারও বাটা সিগন্যাল ও শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে শেষ হয়।