জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরেছে

বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখাছবি: প্রথম আলো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় যে জাতীয় ঐক্য ছিল, তাতে ফাটল ধরেছে। এমন অনৈক্য চলতে থাকলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ব্যর্থ হবে। সে জন্য নতুন বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ১ বছর’-শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন আলোচকেরা।
বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর্জা গালিব। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যে আজকে আমরা ফাটল দেখছি। এই অনৈক্য যদি চলতে থাকে এবং আমরা যদি জাতীয় স্বার্থকে আমাদের সবকিছুর ওপরে স্থান দিতে না পারি, তাহলে এই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন কিন্তু ব্যর্থ হবে।’

মীর্জা গালিব বলেন, ‘আজকে এটা অত্যন্ত ক্লিয়ার (স্পষ্ট) যে এই ফ্যাসিবাদ যারা তৈরি করেছিল, তাদেরকে যদি আমরা একটি ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে না নিতে পারি, তাদের জবাবদিহি যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে তারা আজকে গোপালগঞ্জে যা করেছে, তারা সারা বাংলাদেশকেই আগামী দিনে গোপালগঞ্জ বানিয়ে ফেলবে।’

সেমিনারে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দমন–পীড়নসহ নানা কর্মকাণ্ডের ওপর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় গবেষণা, মিডিয়া ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ইকরাম উদ্দিন সুমন। নিবন্ধ উপস্থাপন শেষে তিনি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারের আরোপিত কর প্রত্যাহার এবং দ্রুত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার দাবি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আবদুর রব বলেন, ‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারলে শহীদদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব হবে না। বিবাদ-বিভাজনের রাজনীতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে, জুলাইয়ের ঐক্য ধরে রাখতে হবে, না হলে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার ফেরত আসবে।’

আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে যে শক্তিশালী ঐক্য ছিল, সে ঐক্য আস্তে আস্তে এখন অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এরপরও আমরা হতাশ হতে চাই না। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন এখনো দেখে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবদান, তা স্বীকার তো করা হচ্ছেই না, বরং তাদের ওপর আরও বেশি বৈষম্য করা হচ্ছে, তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে কর আরোপ করা হচ্ছে, আমি ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি সবার আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান স্বীকার করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ছাত্রশিবিরেরর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কাজী ইমাম হোসেন, দুদক সংস্কার কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মুনিম মুবাশ্বির, রেভল্যুশন ওয়াচের প্রধান সমন্বয়কারী আশরাফুল ইসলাম নির্ঝর, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশর (পুনাব) সভাপতি রায়হান পাটোয়ারী, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক আল সাইমুন হাসানী, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশর (আইইউবি) শিক্ষার্থী তালহা বিন আমিন প্রমুখ।