সরকারের ‘নীলনকশায়’ তারেক-জুবাইদাকে সাজা দেওয়া হতে পারে, আশঙ্কা ফখরুলের

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক কর্মসূচিতে
ছবি: সাজিদ হোসেন

সরকারের ‘নীলনকশা’ অনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তবে তারেক রহমানের সাজা হলেও তা চলমান আন্দোলনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আদালত আগামীকাল ২ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহে আশঙ্কা করছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে সরকারি নীলনকশায় সাজার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকার বিশেষ আদালতে চলমান এই মামলায় অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে সাক্ষী নিয়ে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে। দেশে লাখ লাখ মামলার জট থাকলেও এই মামলায় মাত্র ১৬ দিনে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। রাত ৮টা–৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাক্ষী নেওয়া হয়েছে।’

তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত উপাদান নেই বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তারেক রহমানের সম্পদ বিবরণী ২০০৭ সালে জমা দেওয়া হয়েছিল, সেই সম্পদের পুরো আয়কর জমা দেওয়া হয়েছিল। জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, ৩৫ লাখ টাকা এফডিআর। কিন্তু মামলা করার আগের অর্থবছরে ওই এফডিআরের ট্যাক্স রিটার্ন দেওয়া হয়েছিল।

বিচারের নামে ‘ক্যামেরা ট্রায়াল’ চালানো হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের বিচারকাজের বৈধতা বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাঁদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

সরকার বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি তালিকা করেছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁদের মামলা দ্রুত শেষ করতে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। ইতিমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহকে সাজাও দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দুদক এখন ‘বিরোধীদলীয় দমন কমিশনে’ পরিণত হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের মামলার রায়ে সাজা হলেও চলমান আন্দোলনে সেটি কোনো প্রভাব ফেলবে না। এসব রায় দিয়ে কিছুই হবে না, কারণ জনগণ সব বুঝে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন সম্পাদক কায়সার কামাল, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

আরও পড়ুন