সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তর সম্মেলনকক্ষে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
ছবি: সংগৃহীত

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাকশালের সদস্য হওয়ার জন্য নিজে দরখাস্ত দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, দরখাস্ত দেওয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বাকশালের পক্ষে নিবন্ধ লিখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে বাকশালের সদস্য করা হয়েছিল।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তর সম্মেলনকক্ষে লেখক ও গবেষক সুভাষ সিংহ রায় গ্রন্থিত ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও বাকশাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া ও গ্রন্থকার সুভাষ সিংহ রায় বক্তব্য দেন।

সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে প্রথমে বাকশালের সদস্য করা হয়নি। সেনাবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধানকে করা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ছিলেন উপপ্রধান। সে জন্য তাঁকে প্রথমে সদস্য করা হয়নি। তিনি দরখাস্ত দিয়ে সদস্য হয়েছিলেন, বাকশালের পক্ষে পত্রিকায় নিবন্ধও লিখেছিলেন। সুতরাং আজ যে বিএনপি বাকশাল নিয়ে এত কথা বলে, বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাদের সেই কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই।

তথ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর ছয়জন সংসদ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, পাটের গুদামে আগুন দেওয়া হয়েছিল, হানাহানি করা হয়েছিল। সে জন্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রয়োজন এবং সেটির পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি বাকশাল গঠন করেছিলেন। বাকশালের অধীনে একই প্ল্যাটফর্মে সবাইকে আনা হয়েছিল, যাঁরা নেতা ছিলেন, তাঁদের বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল।

পত্রপত্রিকার বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর চারটি পত্রিকা ছাড়া অন্য পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, এটা সঠিক কিন্তু কোনো পত্রিকার কোনো সাংবাদিক বেকার থাকেননি। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান, গিয়াস কামাল চৌধুরীসহ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। সেই কমিটির সুপারিশে তথ্য অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, কাস্টমস, জুট মিল, বস্ত্র করপোরেশনে সব সাংবাদিকের চাকরি হয়েছিল।

সাংবাদিকেরা এ সময় আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জিততে বিদেশমুখী নীতি নিচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন করলে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন, রাতবিরাতে কারা বিদেশিদের কাছে যায় আর কারা বিদেশিদের দাওয়াত খাওয়ায়, সেটা তো পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনেই প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বলীয়ান, অন্য কোনো কিছুর শক্তিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় গেছে, জনগণের ওপর ভর করেই, জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় গেছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেশ পরিচালনার অন্যতম মূল যে কথা ছিল, “জনগণ এ দেশের মালিক, জনগণকে সেবা করা আমাদের দায়িত্ব।” পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানাভাবে গণতন্ত্র চর্চা করা হয়। বঙ্গবন্ধু যদি সময় পেতেন, তাঁকে সপরিবার ১৫ আগস্ট হত্যা করা না হতো, বাকশাল বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মডেল হতে পারত। কারণ, তারা দেখত বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি চীনের চেয়ে বেশি। আজ চীনের মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলারের ওপরে। আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীরাই দীর্ঘদিন এ দেশ পরিচালনা করেছে এবং তারা বাকশালকে নানাভাবে ভুল ব্যাখ্যা করেছে, বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।’