ক্যাম্পাস ডেমোক্রেসির নামে ভায়োলেন্সকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই: ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ক্যাম্পাস ডেমোক্রেসির নামে যারা ক্যাম্পাসে ভায়োলেন্স করেছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কার্যক্রম নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গত ২০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর আজ ছিল প্রথম সংবাদ সম্মেলন।

আগামীকাল বুধবার ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, ‘ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে ছাত্রলীগ—৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।’

ক্যাম্পাসে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনীতি করার সুযোগ পাবে কি না, তা সাদ্দাম হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, যারা সামরিক স্বৈরশাসকের সেবাদাস, অতীতে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে যারা সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা রেখেছে এবং যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশের রাজনীতি কায়েম করতে চায় ও শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়, সেই অপশক্তির স্থান দেশের কোনো ক্যাম্পাসেই হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের ঘটনা অনেক সময় ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুপ্রবেশকারীরাই সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আমরা চেষ্টা করব, সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, যাঁরা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে আসবেন ও জেলা পর্যায়ে শীর্ষ নেতৃত্বে আসবেন, তাঁরা কেউ যেন হুট করে নেতৃত্বে না আসেন, সেটি আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করলে অনেক সময় যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযোগ আসে, সেগুলো কমে আসবে। গঠনতন্ত্র প্রতিপালন করতে পারলে অনুপ্রবেশের সুযোগ একেবারেই কমে আসবে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ দাবি করেন, ছাত্রলীগ গণরুম প্রথা নামে কোনো প্রথায় বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন সুষ্ঠু ও সুন্দর আবাসিক ব্যবস্থায় থাকতে পারেন, সেটিই ছাত্রলীগের চাওয়া।

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হকের বিদেশ সফর প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে শেখ ওয়ালী আসিফ বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী কোনো অপশক্তির আস্ফালন আমরা কোনোভাবেই সহ্য করব না। তথাকথিত রাজনৈতিক দলের নাম করে তাঁরা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাঁদের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, খবরদার, বাংলাদেশকে নিয়ে একবিন্দু চক্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না, দেশের প্রশ্নে ছাত্রলীগ একচুলও ছাড় দেবে না, রাজপথে কঠোর জবাব দেবে।’

ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির পাশাপাশি বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাদ্দাম হোসেন। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কাল সকাল ছয়টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল আটটায় ধানমন্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন এবং বেলা তিনটায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

এরপর ৬ জানুয়ারি বেলা আড়াইটায় হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার উপকরণ বিতরণের কর্মসূচি।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি রাজিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।