বিএনপির ‘গণদোয়া’কে ঘিরে পুলিশের সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। নয়াপল্টন, ঢাকা, ৩১ মেছবি: সংগৃহীত

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বাদ জুমা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘গণদোয়া’র আয়োজন ছিল। এই আয়োজনকে ঘিরে জুমার নামাজের আগে থেকেই নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া নয়াপল্টন সড়কের (ভিআইপি সড়ক) দুই দিকে রাখা হয় দুটি সাঁজোয়া যান।

তবে বিএনপির নেতা–কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবেই গণদোয়ায় অংশ নেন। এই আয়োজনের জন্য কার্যালয়ের সামনের সড়কে তিনটি পিকআপ ভ্যান একসঙ্গে করে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চে ছিলেন নেতারা। আর মঞ্চের সামনের সড়কের এক পাশে বসেন কর্মী–সমর্থকেরা, সংখ্যায় তাঁরা ছিলেন প্রায় তিন হাজার।

অন্যদিকে নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকায় জুমার নামাজের আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন পুলিশের কয়েক শ সদস্য। পাশাপাশি নয়াপল্টনের পাশে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় ও পল্টন মডেল থানার বিপরীত পাশের সড়কে রাখা হয় দুটি জলকামান, দুটি এপিসি (সাঁজোয়া যান) ও দুটি প্রিজন ভ্যান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মঞ্চ নির্মাণ করে গণদোয়ার নামে সমাবেশের মতো কর্মসূচি করতে চেয়েছিল বিএনপি। কেউ যাতে নাশকতা কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য পুলিশ সতর্ক ছিল।

তবে গণদোয়ার মতো শান্তিপূর্ণ আয়োজনেও পুলিশের এমন প্রস্তুতি দেখে বিএনপির নেতা–কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ভয় পেয়ে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে নয়াপল্টনে পাঠিয়েছে। গণদোয়ার মতো আয়োজনও সরকার সহ্য করতে পারছে না।

গণদোয়ায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। কিন্তু মঞ্চ থেকে জানানো হয়, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় দোয়ায় অংশ নিতে পারছেন না তিনি। তাঁর পরিবর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

পরে মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উঠিয়ে এনেছিলেন তাঁর শাসনামলে। কিন্তু বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে আবারও তলাবিহীন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, এক লিটার তেলের (পেট্রল–অকটেন) দাম আড়াই টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আড়াই টাকা তেলের দাম বাড়ানো মানে সব জিনিসপত্রের দাম আবার বেড়ে যাওয়া।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আগে শুনতাম বর্গিরা দেশে এসে লুট করে নিয়ে চলে যেত। এখন বর্গিরাই ক্ষমতায় বসে গেছে। তারা লুট করে চলে যায় না, সম্পদ বিদেশে পাচার করে দেয়।’

মির্জা আব্বাস বলেন, যারা ভাবছে বিএনপি থাকবে না, তাদের মুখে ছাই দিয়ে বিএনপি টিকে আছে। বিএনপির হাতেই দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব নিরাপদ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গণদোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম। দোয়া পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম। মঞ্চে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক–বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী প্রমুখ।