নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গ

যা বললেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অধীন নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে রাখার পুরোনো প্রস্তাব সামনে নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলে এটি বিবেচনা করা হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসহ বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন গত ডিসেম্বরে। বর্তমান সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব নেই, ফলে দলটিকে নির্বাচনকালীন সরকারে কীভাবে নেওয়া যাবে, সে প্রশ্নও রয়েছে। বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ আগাম হয়ে গেছে বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। এসব বিষয়ে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সামছুর রহমান

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ
ফাইল ছবি
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিলে দলটিকে নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। সরকারের এ প্রস্তাবের ব্যাপারে আপনার মতামত কী? এ প্রস্তাব নতুন করে সামনে আনার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

হারুনুর রশীদ: সরকার এ ধরনের প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) আগেও চালিয়েছে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন চলমান। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কোনো সরকারে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আওয়ামী লীগের অধীন কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই প্রস্তাব সরকারের কূটকৌশলের অংশ।  

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী যদি নির্বাচনকালীন সরকার করা হয়, তাহলে বিএনপিকে অংশীদার করতে হলে দলটির কাউকে টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় নিতে হবে।  মন্ত্রিসভায় ১০ জনের বিপরীতে ১ জন টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন) মন্ত্রী করা যায়। কাজেই  সে ধরনের কিছু হলে সংসদে না থাকায় আপনাদের দর-কষাকষির সুযোগ সেভাবে থাকে না। আপনি কি মনে করেন?

হারুনুর রশীদ: বারবার বলছি, বর্তমান আওয়ামী লীগের অধীন নির্বাচনকালীন কোনো সরকারে বিএনপি যাবে না। বর্তমান সরকার পদত্যাগ করার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। সরকার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশন—সবকিছুই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিএনপির দু–একজন অংশ নিয়ে কিছুই বদলাতে পারবে না। পুরো ব্যবস্থার মেরামত লাগবে।  

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বর্তমান সংসদের মেয়াদ এক বছরের বেশি সময় বাকি থাকতেই বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেন। অনেকে বলছেন, এই পদত্যাগ বেশি আগাম হয়ে গেছে। আপনি কী মনে করেন, পদত্যাগের সময় সঠিক ছিল?

হারুনুর রশীদ: সংসদ থেকে পদত্যাগ করার বিষয়ে দলের উচ্চমহল থেকে দীর্ঘদিন ধরেই চাপ ছিল। ২০১৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে এই সংসদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তা–ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দিয়ে তাঁদের ভূমিকা রাখছিলেন। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোয় সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে যেভাবে বাধা প্রয়োগ করেছে ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। ঢাকার গণসমাবেশের আগে বিএনপির কার্যালয়েও হামলা করা হয়। এরপর আর সংসদে থাকার মতো পরিবেশ ছিল না।    

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জাতীয় সংসদ থেকে আপনাদের এই পদত্যাগ চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোনো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পেরেছে বলে মনে করেন কি না। কী ভাবনা থেকে আপনারা পদত্যাগ করেছিলেন?

হারুনুর রশীদ: সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে এখন আর আলোচনার কিছু নেই। যেহেতু সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি, তাই সংসদে আর থাকার সুযোগ ছিল না। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ছিল। নেতা-কর্মীদের চাওয়া ছিল সংসদ থেকে বের হয়ে আসা।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পদত্যাগ করা বিএনপির সংসদ সদস্যদের একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তার। তিনি দলছুট হয়ে ক্ষমতাসীনদের সমর্থনে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন। অনেকেই বলেন, এই ‘উকিল সাত্তার মডেল’–এর নির্বাচনের কারণে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি বেশি আলোচনায় আসতে পারেনি। যে উদ্দেশ্যে আপনারা পদত্যাগ করেছিলেন, তা ব্যাহত হয়েছে এ ঘটনায়।    

হারুনুর রশীদ: ব্যক্তিস্বার্থে কেউ এমন সিদ্ধান্ত (নির্বাচনে অংশ নেওয়া) নিতে পারে। এতে দল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। উকিল সাত্তারকে নির্বাচনে নিয়ে সরকার আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকার উকিল সাত্তারকে নির্বাচনে নিলেও ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারেনি। ভোটাররা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। বিএনপি থেকে উকিল সাত্তারের মতো দু-একজনকে সরিয়ে নিলে সংকটের সমাধান হবে না।