তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে ১৫ জুলাই দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বেলা দুইটায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোটাবিরোধী কতিপয় নেতা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) প্রস্তুত।’
সেদিন বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়ার দিকে যায়। অপর অংশ টিএসসিতেই অবস্থান করে। আন্দোলনকারীরা দুটি হল ঘুরে বিজয় একাত্তর হলে গেলে বেলা তিনটার পর সেখানে তাঁদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করে। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে ভিসি চত্বর এলাকায় ছাত্রীদের লাঠি দিয়ে পেটান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। দুই ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটানোর একটি ছবি ভাইরাল হয়, যা প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকের তোলা।
সেদিন বিকেলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকাতেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশ আরেক দফা হামলা চালায়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হতে চাইলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ তাঁদের দোয়েল চত্বর এলাকায় বাধা দেয়। পরে দোয়েল চত্বরের পাশে কার্জন হলসংলগ্ন সড়কের ফুটপাতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম (এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক)।
নাহিদ বলেছিলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ১৬ জুলাই বেলা তিনটায় সারা দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীরা যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য হলে হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান সেদিন জানিয়েছিলেন তিনি।
মূলত ১৫ জুলাই থেকেই কোটা সংস্কারের আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করে। ১৫ জুলাই বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম (বর্তমানে এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক)। তিনি গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ জুলাই বেলা দুইটা বা আড়াইটার দিকে আমরা জানতে পারি যে বিজয় একাত্তর হলে আমাদের ভাইদের আটকে রাখা হয়েছে, হল থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। তখন আমরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলের সামনে যাই। হলের ছাদ এবং ভেতর থেকে সেদিন আমাদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়েছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সেদিন জিয়া হল ও বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরাও আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও আমাদের ভাই-বোনদের ওপর নির্মম হামলা চালিয়েছিল। সেই রক্তাক্ত দিনটির কথা মনে হলে আজও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।’