গণমিছিলের আগেই আন্দোলনের ভিত্তি চূড়ান্ত করতে চায় ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’

৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচির আগেই বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি চূড়ান্ত করতে চাইছে সাতদলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। এই জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে, যেখানে রাষ্ট্র মেরামতের উল্লেখ নেই। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ ‘সরকার ও শাসন ব্যবস্থা’ বদলে ১৪ দফা ঘোষণা করেছে। এই ভিন্নতা আন্দোলনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মনে করেন, যুগপৎ আন্দোলনে নামার আগেই ভিত্তিটা চূড়ান্ত করতে হবে এবং সব দাবি সমন্বয় করে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে নেতারা বলছেন, বিএনপি সরকার হটানোর লক্ষ্যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে। তাতে শাসনব্যবস্থা বদলের কোনো উল্লেখ নেই। দলটি আলাদাভাবে ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিএনপির এই সবগুলো দাবি গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফাতেও রয়েছে। তাই যুগপৎ আন্দোলনে নামার আগে এই ১০ দফার সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের অঙ্গীকার বা প্রস্তাবকে সুনির্দিষ্ট করতে চায় গণতন্ত্র মঞ্চ।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ (সমন্বয়) কমিটির যে বৈঠক হয়, সেখানে এ বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়। বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিষয়টি তাঁরা দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদকে জানাবেন। এর ফলাফল নিয়ে কাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির সমন্বয় কমিটির দায়িত্বশীলদের বৈঠক হবে।

আজ বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির শহীদউদ্দিন মাহমুদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান ও গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সরকারের ‘দমন-নিপীড়ন’, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি’, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলার প্রতিবাদে গণ-অনশন, গণ-অবস্থান, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার প্রস্তাব আসে বলে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে একটা যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। দ্রুত এটা চূড়ান্ত করে সামনের যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নেওয়া হবে। ৩০ ডিসেম্বর যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালিত হবে, পরবর্তী কর্মসূচিও সেখান থেকে ঘোষণা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেএসডির আ স ম আবদুর রব ও গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক বিদেশে থাকায় এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান অসুস্থ থাকায় বৈঠকে ছিলেন না।

১২ দলীয় জোটের সভা

৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে আজ বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে প্রতিনিধি সভা করেছে নবগঠিত ১২ দলীয় জোট। সভায় সিদ্ধান্ত হয় রাজধানীর বিজয়নগরের পানির ট্যাংক এলাকা থেকে মিছিল বের করে মালিবাগ গিয়ে শেষ হবে। সব দলের নেতা-কর্মীদের বেলা দুইটায় সেখানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়।

এ ছাড়া সভায় ১২ দলীয় জোটের নেতারা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তার নেতাদের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা অবিলম্বে কারাবন্দী সব নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি জানান। সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সভাপতিত্ব করেন।

২২ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিকদের ১২টি দল মিলে জোট গঠন করে। দলগুলো হলো জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ এলডিপি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি, একাংশ), বাংলাদেশ জাতীয় দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির জাগপা (একাংশ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।

এর মধ্যে কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) নিবন্ধন আছে নির্বাচন কমিশনের।