বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের নতুন কর্মসূচি আজ বুধবার ভোরে শুরু হয়েছে। আগামী শুক্রবার সকাল ছয়টায় অবরোধ শেষ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুই দিনের অবরোধ শেষে শুক্র ও শনিবার বিরতি দেওয়া হবে। এরপর রোববার থেকে আবারও হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

তবে বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত এভাবে হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচিতে থাকতে চায় বিরোধী দল। এরপরও যদি সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি অগ্রাহ্য করে তফসিল ঘোষণা করে ফেলে, তখন কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে।

ইতিমধ্যে ঘোষিত কর্মসূচি যেন আরও কঠোরভাবে পালন হয়, সে ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে কথা বলছেন। তিনি চলমান আন্দোলন–কর্মসূচিগুলো তদারক করছেন।

আরও পড়ুন

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতা কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আপাতত হরতাল, অবরোধের কর্মসূচিতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নীতিনির্ধারকদের। তবে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়ার মতামত দিয়েছেন অনেকে।

বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট, এলডিপিসহ অন্যান্য দল ও জোটও যুগপৎভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। জামায়াতে ইসলামীও পৃথকভাবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ দিয়েছে।

বিএনপিসহ সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলনে শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সে পর্যন্ত শক্ত কর্মসূচিতে থাকতে চায় বিরোধী দলগুলো। এসব দলের নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, এ পর্যন্ত ঘোষিত হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিগুলো ভালোভাবে পালিত হয়েছে। এ কর্মসূচির সঙ্গে মানুষ একাত্ম। তবে সরকার পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন চালিয়ে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করায় মানুষ সেভাবে নামতে পারছেন না। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন।

হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ডের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয় বিএনপি। এরপর দলের মহাসচিবসহ নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৩১ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় পাঁচ দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। আজ তৃতীয় দফায় আবার দুই দিনের অবরোধ শুরু হলো।

‘অবরোধ কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ’

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মহাসড়কে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। আমাদের এই অবরোধ কর্মসূচি গণদাবির ওপর ভিত্তি করে। এটা নিছক বিএনপির কোনো দলীয় কর্মসূচি নয়।’

রিজভী বলেন, জনগণ তার মালিকানা বঞ্চিত হয়ে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন যত রক্ত ঝরিয়েছে, তাদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো এই সংগ্রাম করছে। নানা রকমের রাষ্ট্রীয় উৎপীড়নের মুখেও তাঁরা মাঠে আছেন। প্রত্যেকের কাছে আকুল আহ্বান, শত বাধা অতিক্রম করে যেমন কর্মসূচি পালন করে এসেছেন, আবার এই কর্মসূচি পালন করবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথে পথে বাধা দেবেন, মহাসড়কে অবরোধ তৈরি করবেন শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেই।

আরও পড়ুন

সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে নাশকতার নানা মহাপরিকল্পনা তারা করছে। আমরা রাস্তায় উপস্থিত হব এবং সরকারের অশুভ নীলনকশা আমরা প্রতিহত করব।

এ দেশে যারা গণতন্ত্র চায়, যারা বাক্‌স্বাধীনতা চায়, যারা নিজের ভোটটা পছন্দমতো ব্যক্তিকে দিতে চায়, তারা এই আন্দোলনের অবরোধ কর্মসূচির পক্ষে রয়েছে।’

অবরোধের সমর্থনে গতকাল সন্ধ্যার পর রাজধানীর মগবাজার ও ফার্মগেট এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছেন।