সাক্ষাৎকার

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কমেছে 

নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী (মাগুরা–২ আসন) বীরেন শিকদারের সঙ্গে।

প্রথম আলো:

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের প্রশ্নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ—ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নেতাদের এমন অভিযোগের ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

বীরেন শিকদার: আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই হিন্দুসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কমেছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি নিজেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন। সে হিসেবেও আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ সদিচ্ছা নিয়েই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করছে।

প্রথম আলো:

কিন্তু জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতিও ছিল আপনাদের দলের। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেওয়া এই প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়িত হয়নি—অভিযোগ সংখ্যালঘু নেতাদের।

বীরেন শিকদার: গত নির্বাচনে দেওয়া সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি, এটা ঠিক। তার মানে এই নয় যে সরকারের সদিচ্ছা নেই। আওয়ামী লীগ বারবার বলছে, তারা এগুলো বাস্তবায়ন করবে। এ নিয়ে সন্দেহ বা অসন্তোষের কিছু নেই।

প্রথম আলো:

সংখ্যালঘু নেতাদের অনেকে এমন বক্তব্য দিয়ে আসছেন যে তাঁদের সম্প্রদায়ের বড় অংশই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। ক্ষমতাসীন দল সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক হিসেবে দেখে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রশ্নে তারা আন্তরিক নয়। এই বক্তব্য কি সঠিক মনে করেন?

বীরেন শিকদার: আওয়ামী লীগ কখনো ভোটব্যাংক হিসেবে বলে না। আমিও মনে করি, ভোটব্যাংক বলাটা সম্মানের নয়। তবে সংখ্যালঘুরা যেমন আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখে, সেখানে আমাদের দলও সেই আস্থাকে সম্মান দেয়। আওয়ামী লীগই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে অর্পিত সম্পত্তি আইন করেছিল। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে এই আইন বাস্তবায়ন শুরু করে। 

প্রথম আলো:

কিন্তু দেশের অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। 

বীরেন শিকদার: এ ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে স্থানীয় কেউ করে থাকতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এসব করে না; বরং কোনো ঘটনা ঘটলে দল তাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রথম আলো:

বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সহিংসতার বিচারপ্রক্রিয়া এগোয় না—এই অভিযোগে সংখ্যালঘু নেতারা অনেক সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।

বীরেন শিকদার: হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হয়। শুধু সংখ্যালঘুদের মামলা নম্বর, ফৌজদারি অপরাধের সব মামলাতেই দীর্ঘসূত্রতা হয়। কোনো দেওয়ানি মামলা শুরু করলে মামলা শেষ হতে অনেক সময়—এক পুরুষ পার হয়ে যায়। তবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মামলাগুলোতে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করার সরকারের চেষ্টা রয়েছে।

প্রথম আলো:

নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলো হামলার ভয় ও নানা শঙ্কা প্রকাশ করে থাকে। সেটাকে আপনাদের দল কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে?

বীরেন শিকদার: এবার আমরা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ভোটে আছি। আমাদের প্রতিপক্ষ বিএনপি ভোটে নেই। ফলে ভোটকে কেন্দ্র করে এবার সংখ্যালঘুদের ওপর চাপ কম। এ ছাড়া এবার সরকার ও আওয়ামী লীগও সতর্ক রয়েছে। ফলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যাপক আগ্রহও সৃষ্টি হয়েছে। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাদির কল্লোল