এভারকেয়ারের সামনে কড়া নিরাপত্তা, বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভিড় নেই

এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান। ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় হাসপাতালের সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে প্রথম কয়েক দিনের মতো হাসপাতালের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের তেমন ভিড় নেই।

আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাসপাতালের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। আশপাশে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও এসএসএফের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে দ্রুত এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দেশজুড়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিদিন তাঁর খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করতেন নেতা–কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সামনে ভিড় না করতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বিএনপির একাধিক নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে নেতা–কর্মীদের হাসপাতালের সামনে ভিড় না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে নেতা–কর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করছেন।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে আনার পর বেশ কয়েকবার তাঁর খোঁজ নিতে এসেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে নিজ অবস্থানে থেকে ম্যাডামের সুস্থতা কামনায় দোয়া করি।’

মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম আরও বলেন, ‘সব নেতা–কর্মী হাসপাতালের সামনে ভিড় করলে জটলা তৈরি হয়। অনেক সময় গণমাধ্যমে ভুল তথ্যও যায়। তাই নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ অবস্থান থেকে দোয়া করছি।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধানে যুক্ত আছেন তাঁর পুত্রবধূ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হাসপাতালে আসা–যাওয়া করছেন।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রার জন্য উপযুক্ত নয়, বিশেষ করে হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা বেশ জটিল পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যাও অপরিবর্তিত। তাঁকে ঢাকায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিদিনই ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর প্রক্রিয়াটিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। মেডিকেল বোর্ডের অধীন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থাকে ‘গুরুতর’ হিসেবেই দেখছেন এবং কিডনির কার্যক্ষমতা স্থিতিশীল হওয়াকে সার্বিক উন্নতির জন্য জরুরি বলে মনে করছেন।