মুসকিল লীগ, নাকফুল, বৈরাবৈরী পার্টি—এগুলোও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন চায়
মুসকিল লীগ—একটি রাজনৈতিক দলের নাম। একইভাবে বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ—এগুলোও রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। স্বতন্ত্র দল হিসেবে এসব নামে নিবন্ধনের জন্য আবেদন পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নাকফুল বাংলাদেশ, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বৈরাবৈরী পার্টি এগুলোও রাজনৈতিক দল। এই দলগুলোসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ইসিতে নিবন্ধিত হতে আবেদন করেছে ৮০টি রাজনৈতিক দল। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই নামসর্বস্ব। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কয়েকটি দলও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
ইসিতে নিবন্ধিত না হলে কোনো দল তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। আর এই নিবন্ধন পেতে আইন অনুযায়ী বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৩৯টি।
নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গত মে মাসে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। পরে দুই মাস সময় বাড়ানো হয়। আজ রোববার ছিল নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। আবেদনগুলো যাচাই–বাছাই করে ইসি দেখবে, এই দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করছে কি না। এসব যাচাই শেষে আগামী বছরের জুনে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়া হবে।
ইসি সূত্র জানায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ৭৬টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ইসি একটি দলকেও নিবন্ধনের উপযুক্ত মনে করেনি। অবশ্য পরে আদালতের নির্দেশে দুটি দল নিবন্ধন পেয়েছিল।
এবার নিবন্ধনের জন্য যে ৮০টি দল আবেদন করেছে, তাদের নামের তালিকা গণমাধ্যমে দিয়েছে ইসি। তাতে দেখা যায় বেশির ভাগ দল নামসর্বস্ব। তবে মাঠে সক্রিয় আছে, এমন কয়েকটি দলও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য যেসব দল আবেদন করেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টি, নতুন বাংলা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবৈরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, এ বি পার্টি, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রীন পার্টি, বাংলাদেশ সর্বজনীন দল, গণ রাজনৈতিক জোট গর্জো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নতুন ধারা বাংলাদেশ-এনডিবি, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, জাতীয় জনতা পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), ভাসানী অনুসারী পরিষদ, নাকফুল বাংলাদেশ, মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস, মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিজম ডেমোক্রেটিক পার্টি, রাজনৈতিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জনতার অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি-বিএইচপি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএনজিপি), জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, যুব স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিজেএল), বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গ লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি), জনতার অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জনস্বার্থে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় ইনসাফ পার্টি, সাধারণ জনতা পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি (বিইউআইপি), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট গ্রিন পার্টি, বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দল (বিডিপি), মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, গণ অধিকার পার্টি (পিআরপি), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) ও যুবসমাজ পার্টি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তার তদারকিতে নামছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ে দলের অফিস; নির্বাচিত কমিটি এবং সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে হালনাগাদ তথ্য চেয়ে দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে ইসি। কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে দল নিবন্ধনের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নামসর্বস্ব এবং হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দলগুলোর রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন চাওয়াকে ‘হাসির বিষয়’ বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। রাজনীতি জনকল্যাণমূলক পেশা। এভাবে এমন প্রতিষ্ঠানকে হাসির বিষয়ে পরিণত করাটা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তারা নিশ্চয়ই বিষয়টি বিবেচনা করবে।
এর আগেও নামসর্বস্ব দলকে নিবন্ধন দান, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, এমনকি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমনটা হয়েছে। আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলই এসব কাজ করেছে। তারা অনেকে রাজনীতিকে খেলা মনে করে। রাজনীতি তো খেলা নয়।’