শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি-জামায়াতেরও দোয়া করা উচিত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে আবারও ক্ষমতায় আসেন, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে আবারও ক্ষমতায় আসেন, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দোয়া করা উচিত বলেছেন তিনি। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর জয় চেয়েও মোনাজাত করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সম্প্রীতি সভায় ডিসি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যদি থাকে, তাহলে আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ বলি, বিএনপি বলি, জামায়াত বলি—সবাই নিরাপদ থাকবে। আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতেরও এখন দোয়া করা উচিত শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।’
গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সম্প্রীতি সভার আয়োজন করা হয়। ওই দিন ছিল জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

বেলা ১১টার দিকে সভা চলাকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম সেখানে ঢুকে পড়েন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ডিসি মমিনুরের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই নির্বাচনে পেয়ারুলসহ তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সবাই হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় ডিসিও নেতাদের সঙ্গে হাত তুলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী পেয়ারুলের জয় কামনা করেন।

মনোনয়ন জমা দিয়ে নেতারা সম্প্রীতি সভায় বসে পড়েন। ডিসি মমিনুর বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের সকল পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত আছেন। কিছু কথা বলি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি, আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র চলছে।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে  সম্প্রীতি সভায় ঢুকে মনোনয়নপত্র  জমা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।
ছবি: সংগৃহীত

ওই সভায় জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি মমিনুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন আমি আমার কার্যালয়ে জমা নিই সাধারণত। সম্প্রীতি সভা চলাকালে পেয়ারুল সাহেব মনোনয়ন জমা দিতে সম্মেলনকক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে মনোনয়ন গ্রহণ করি। যখন আমার সামনে মোনাজাত করছেন তাঁরা, তখন একজন মুসলমান হিসেবে আমি যদি হাত না তুলি, তাহলে অন্য ইস্যু হবে সেটা।’ তিনি বলেন, ‘আমি সম্প্রীতি সভায় বক্তব্য রেখেছি। এ সময় মনোনয়ন জমা দিতে আসা আওয়ামী লীগ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সে জন্য জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের দায়িত্ব নিতে বলেছি। জাতির জনক নিয়ে কথা বলেছি, রাষ্ট্রের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছি। এটা নিয়ে ভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ডিসি দুর্গাপূজা যাতে সুন্দরভাবে হয়, সে জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি (ডিসি) বলেছেন, গত বছর নানা ঘটনা ঘটেছে। এবার যাতে এ রকম কিছু না হয়, সেদিকে সবাই সজাগ থাকবেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি।’

ডিসির এ রকম বক্তব্যের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ন্যূনতম শিষ্টাচারবোধ, নৈতিকতাবোধও তাঁদের নেই। তাঁরা কি প্রশাসন লীগ? তাঁরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, সকল নাগরিকের সেবক। আওয়ামী লীগের সেবক নন।’ তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করার কথা। একজন ডিসি কিংবা রিটার্নিং কর্মকর্তার এই বক্তব্য এবং মোনাজাত নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা পরিষদ (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) বাদে বাকি ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচন আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেন না। উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখানে ভোটার।