ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ‘ডাকাতি’ করে ক্ষমতায় আসতে চায় সরকার

গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার নতুন পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আবার গায়ের জোরে টিকে থাকতে চায়। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ৩ আগস্টছবি: খালেদ সরকার

তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ও দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতাসীন সরকার গত দুই নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে। এবার তারা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট ‘ডাকাতি’ করে ক্ষমতায় আসতে চায়। তবে এবার ইভিএম কৌশল ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না।
‘সরকার ইভিএমে নির্বাচন করতে চায় কেন?’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার ইভিএমে নির্বাচন করতে চায় এ জন্য যে নতুন পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আবার গায়ের জোরে টিকে থাকতে চায়। অতএব এটা হতে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তাই তারা ইসির সঙ্গে সংলাপে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তারপরও যারা সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ দল ইভিএম চায় না।

ইভিএম প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা তো এটা চাই–ই না।’
ইভিএম মেশিনের সংকট তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ইভিএম মানুষ তৈরি করেছে। মানুষ এটাকে যেভাবে কমান্ড দেবে, ইভিএম সে অনুযায়ী চলবে। এটাই সফটওয়্যারের নিয়ম। ভোট দেবেন ধানের শীষে, চলে যাবে নৌকায়—এটা খুব কঠিন কিছু নয়। দেশের ইভিএম মেশিনে ভোটের পর পেপার দেওয়া হয় না। অন্যান্য দেশে এটা করা হয়। একজন ভোটার ভোট দেওয়ার পর যে কাগজ আসে তাতে দেখতে পান, তিনি কত নম্বর ভোটার, কাকে ভোট দিলেন। অথচ এ ব্যবস্থা দেশের মেশিনে নেই। অর্থাৎ, প্রথম থেকেই ইভিএমের উদ্দেশ্য হচ্ছে ডাকাতি।

সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম কোনো কাজের জিনিস নয়। তাহলে সরকার চায় কেন? আসলে সরকার না চেয়ে করবে কী? যে পদ্ধতিতে গত দুটি নির্বাচন তারা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে, সেই পদ্ধতি যে এবার চলবে না, তা খুব স্পষ্ট। কিন্তু সরকার যেকোনো প্রকারে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এ জন্য তারা ইভিএমে ভোট চায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে লড়াই ছাড়া বিকল্প নেই।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও যদি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকলে ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। এ জন্য নির্বাচন কমিশন ও ইভিএম নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই না।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে গেলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা আনতে হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য জোর করে আদালত থেকে রায় এনে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছে। এই সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেখানে যদি ইভিএম ব্যবহার হয়, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। সেটা চুরি না, ডাকাতির পর্যায়ে পড়বে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলাম। তিনি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। এবার তারা ইভিএম দিয়ে মানুষকে বোকা বানাতে চাচ্ছে। তারা আবার ইভিএম পদ্ধতি অবলম্বন করে ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। আমাদেরকে আর বোকা বানানো যাবে না।’

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বিলকিছ ইসলাম, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, আনোয়ার হোসেন বুলু প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন ইয়ুথ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।