জামায়াতের কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, শুল্কছাড়ের অনুরোধ করলেন শফিকুর

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েছবি: জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। পাশাপাশি বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা দরকার হলে সেটি করতেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেছেন তিনি।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে দলটির আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সেখানে বাংলাদেশে চলমান সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন ও আঞ্চলিক সিকিউরিটি থ্রেটসহ (নিরাপত্তা হুমকি) বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

সাক্ষাতের পর এক ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারে সব বিদেশিরই স্টেক ও কনসার্ন (অংশীদারত্ব ও উদ্বেগ) আছে। তিনি (যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বিশেষ করে সংস্কারটা কীভাবে হচ্ছে, কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে, নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন এবং এখানে কোনো সিকিউরিটি থ্রেট (নিরাপত্তা-হুমকি) আছে কি না, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের ব্যাপারে কথা হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলে যে সিকিউরিটি থ্রেট আছে, সেসব ব্যাপারে তাঁরা আমাদের অবস্থানটা জানতে চেয়েছেন এবং টেররিজমের ব্যাপারে আমাদের ভিউজ (দৃষ্টিভঙ্গি) ও বাংলাদেশের অবস্থানও তাঁরা জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কেও তাঁরা কথা বলেছেন।’

আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, তাঁরা বলেছেন, তাঁরা একটা অবাধ নির্বাচন ও মৌলিক সংস্কার চাইছেন। বাংলাদেশে যাতে আর কোনো দুর্বৃত্তায়ন বা চাঁদাবাজির রাজনীতি ফিরে না আসে, সে ব্যাপারে তাঁরা সুদৃঢ় ভূমিকায় আছেন। তাঁরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়বেন। গণতন্ত্রের পক্ষে জামায়াতের অবস্থান মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেছেন। সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেও একটা অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার নীতিতে তাঁরা বিশ্বাস করেন, সেটিও রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে।

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর নারী নেত্রীরা। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে
ছবি: জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো হবে, সেই আলোচনাও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আগেও ওরা কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও ক্লোজলি (ঘনিষ্ঠভাবে) কাজ করবেন, এই আশাবাদ তাঁরা ব্যক্ত করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ব্যবসার ওপর শুল্ক বসিয়ে দিয়েছে, যেটা আমাদের দেশের বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতকে সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। জামায়াতের আমির রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ করেছেন এ ব্যাপারে যেন কনসিডার (বিবেচনা) করা হয় এবং শুল্ক কমিয়ে যাতে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়, যাতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রাখা যায়।’

‘ষড়যন্ত্র থাকলে মানবাধিকার কার্যালয়ের বিরোধিতা’

ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না। উত্তরে জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আজকে এ ব্যাপারে কোনো কথা আসেনি। এটা তো তাঁদের সঙ্গে আলোচনার এত প্রাসঙ্গিকতাও নেই।’

মানবাধিকার কার্যালয় নিয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। মানবতাবিরোধী, আমাদের সংস্কৃতিবিরোধী, আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনবিরোধী কোনো একটি কিছু করার জন্য যদি এখানে কোনো ষড়যন্ত্র থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই এটার বিরোধিতা করব এবং আমরা বিরোধিতা করছি। যদি ইতিবাচক কাজ করার জন্য এটার এক্সপানশন (সম্প্রসারণ) হয়, তাহলে তো ইট’স ওকে। এটা যদি বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেব।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক হামলা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি।

ভারত নিয়ে আলোচনায় কিছু বলা হয়েছে কি না সে প্রশ্নে তাহের বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো দেশের ব্যাপারে সে রকম কথা হয়নি। আমরা বলেছি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরাও কনসার্নড (উদ্বিগ্ন)। যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা করা সম্ভব ও প্রয়োজন, সেখানে আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত পোষণ করেছি।’

নির্বাচন নিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি বলে জানান এই জামায়াত নেতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এত সুনির্দিষ্ট আমরা করতেও চাই না। কারণ, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা বলেছি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তোমাদের সহযোগিতা করার দরকার হলে তোমরা এটা করবা।’

ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের তাহেরের সঙ্গে ছিলেন।