উৎসবে–উচ্ছ্বাসে মেতেছিল রবীন্দ্রসরোবর

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমবেত নৃত্য পরিবেশনা। গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চেছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হলেও তার রেশ এখনো জড়িয়ে আছে ঢাকা শহরে। শনিবারের সকাল ভিজিয়ে দিয়ে একপশলা বৃষ্টিও নেমেছিল। আর শেষ বেলাটি ছিল মেঘমেদুর। ধানমন্ডির খোলা আকাশের তলায় রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে আবৃত্তি, গান, নাচসহযোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি যেমন ছিল মনোজ্ঞ, তেমনি তা উপভোগে প্রকৃতির বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয়নি দর্শকদের। ফলে বেশ আনন্দঘন হয়ে উঠেছিল সন্ধ্যা থেকে রাতের বেশ খানিকটা অবধি এই আয়োজন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের পক্ষ থেকে। ‘উচ্ছ্বাসে উৎসবে’ শীর্ষক এই আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন এই আসনের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।

রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে বেশ অনেক দিনে পরে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো। মঞ্চ এবং চারপাশ সাজানো হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা দিয়ে। নেপথ্যে ছিল বড়সড় ডিজিটাল পর্দা। পর্দায় অনুষ্ঠানের চলমান দৃশ্য ও নেতাদের বক্তব্যের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাসংগ্রাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।

যন্ত্রে জাতীয় সংগীতের সুরবাদনের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তির প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসে তিনি খুবই আনন্দিত। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সৌভাগ্যবান যে দেশের এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিতে বঙ্গবন্ধুর পরে কেবল তিনিই তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন এক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁদের সাঁতার কাটতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সারা জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেই দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। বহু বিপ্লবী, বহু নেতা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীন করেছেন। জাতির ইতিহাস থেকে দুজন মানুষের নাম কখনো মুছে ফেলা যাবে না। একজন মানচিত্রের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর দ্বিতীয়জন তাঁর কন্যা দারিদ্র্য থেকে মুক্তিদাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ৪৩ বছর ধরে দলের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আর পাঁচ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশে অভাবিত উন্নয়ন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিণত হবে স্মার্ট বাংলাদেশে।

ফেরদৌস আহমেদ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। দলটির রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বর্তমান সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে উঠে আসবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অভিনয়শিল্পী অরুণা বিশ্বাস। আলোচনার পরে কবিতা আবৃত্তি করেন তানভীন সুইটি, বিজরী বরকতউল্লাহ, হৃদি হক, দীপা খন্দকার, নাদিয়া আহমেদ ও শামীমা তুষ্টি।
ইবান শাহরিয়ার সোহাগের পরিচালনায় চাঁদনী ও শাওনের নেতৃত্বে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন সোহাগ ড্যান্স ট্রুপের সদস্যরা।

অনুষ্ঠানে শিল্পী আঁখি আলমগীর ‘আমার দুচোখ ভরা স্বপ্ন ও দেশ তোমার জন্য’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘মধু হই হই’, ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে’সহ বেশ কয়েকটি গান গেয়ে শোনান।

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা গেয়ে শোনান ‘ঢাকা শহর আইসা আমার’। গানের পরে আবার ছিল নাচের পালা। আশনা হাবিব ভাবনার পরিবেশনায় ছিল ‘নৃত্যছন্দে’ নামের সমবেত নৃত্য।
শেষে ছিল তাহসান খানের গান। রাত তখন দশটার কাছাকাছি তাহসান ‘আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ’, ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন’সহ তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে মাতিয়ে তুলেছিলেন দর্শকদের।