নির্বাচন কমিশন সরকারের বরকন্দাজে পরিণত হয়েছে: মান্না

রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ আজ সমাবেশের আয়োজন করে। ১৩ ডিসেম্বরছবি: প্রথম আলো

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। তারা এখন তাদের পাতানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে মিছিল–সমাবেশ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে, তারা সরকারের বরকন্দাজে পরিণত হয়েছে।

আজ বুধবার পুরানা পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে বক্তৃতায় মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন তাঁর দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি পরিচালনারও দায়িত্ব নিয়েছেন। জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে কি করবে না, তা ঠিক করতে রওশন এরশাদ গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। এই তামাশার নির্বাচন জনগণ মানবে না। ১৭ ডিসেম্বরের পর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরও বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। গণ–আন্দোলনে এই সরকার ভেসে যাবে।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচির ধারায় থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ আজ দুপুরে তোপখানা রোড থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। অবরোধের সমর্থন, সরকারের পদত্যাগ, একতরফা নির্বাচন বন্ধের স্লোগান দিয়ে মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে ফকিরেরপুল, কালভার্ট সড়ক দিয়ে বিজয়নগর হয়ে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, গত ৩০ নভেম্বরের পর থেকে দেশজুড়ে গণগ্রেপ্তার চলছে, ৮৮৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। শুধু নির্বাচনই নয়, বিচারের নামেও প্রহসন চলছে। যেন নির্যাতনের প্রতিযোগিতা চলছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সংবিধান জনসাধারণকে মিছিল, সমাবেশ, প্রতিবাদের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নাগরিকের সেই সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে চেষ্টা করছে। ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। তিনি এই অপচেষ্টা থেকে নির্বাচন কমিশনকে সরে আসার দাবি করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন কমিশনের আত্মবিশ্বাস শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন মানুষের প্রতিবাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষ দমবে না। তিনি নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান বলেন, দেশে এখন আইন বলে কিছু নেই। যা কিছু সরকারের পক্ষে যাবে, সেটিই আইন। আর সরকারের বিপক্ষে কথা বললে তা বেআইনি। এভাবেই দেশ চলছে।

সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, অতীতেও স্বৈরশাসকেরা এ দেশের জনগণের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তার ফল ভালো হয়নি। সরকার ও তার অনুগত নির্বাচন কমিশন গণমানুষের কণ্ঠরোধের যে অপচেষ্টা করছে, তা সফল হবে না। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সমাবেশ ও মিছিলে আরও অংশ নেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা এলিজা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক দিদারুল ভূঁইয়া, জেএসডির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ বেলায়েত হোসেনসহ অনেকে।