দেশের মানুষ এভাবে আর চালাতে দেবে না: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মধ্যরাতে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে সরকার দেশের মানুষের সর্বনাশ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ আর এভাবে দেশ চালাতে দেবে না।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের জেলা সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমের মৃত্যু এবং জ্বালানি তেল ও সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।

বেলা ১১টা থেকে এই সমাবেশ শুরুর পর প্রচণ্ড রোদের কারণে সমাবেশে আসা দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে সড়কে অবস্থান না নিয়ে ফুটপাত ও আশপাশে যেখানে রোদের তীব্রতা কম, সেখানে অবস্থান নেন। সমাবেশের কারণে যানবাহন চলাচল আজ বন্ধ হয়নি। কৃষক দলের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। সমাবেশের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চের পূর্ব দিকে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখতে দেখা গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে। চালের দাম, তেলের দাম, সারের দাম, যাতায়াত খরচ বাড়বে। সবকিছু বাড়বে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতি আরও খারাপ হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন কমছে, তখন দেশে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমে, তখন তারাও কমায়। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমে তখন এখানে দাম বাড়ানো হয়। কেন? তারা যে লুটপাট করে, চুরি করে, দুর্নীতি করে সেই টাকাকে হালাল করার জন্য জনগণের পকেট থেকে কেঁড়ে নিয়ে যায়।’

জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যেসব তথ্য দিচ্ছে এর একটা তথ্যও সঠিক নয়। সব তথ্য হচ্ছে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

বিএনপির মহাসচিব জনগণকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের (সরকারের) তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্যিকার যে বিষয়টা, তা জানতে নিজেদের প্রশ্ন করুন। চালের দাম, তেলের দাম, সবজির দাম, মাছের দাম, গোশতের দাম কত বেড়েছে, তাহলে বুঝবেন দেশের অবস্থা কী।

মির্জা ফখরুলের ভাষ্য, জনগণকে সরকারের দরকার নেই। কারণ, তার (সরকারের) আছে পুলিশ বাহিনী, বন্দুক বাহিনী—এসব বাহিনী দিয়েই সে (প্রধানমন্ত্রী) দেশ চালাবে। এভাবে আর হবে না। এই দেশের মানুষ আর এভাবে দেশ চালাতে দেবে না।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, বাইক চালিয়ে যাঁরা পরিবার চালাচ্ছেন, তাঁরা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকেরাও। ডিজেলের দাম বাড়লে কীভাবে সেচের কাজ করবেন তাঁরা। এগুলোয় সরকারের কোনো কিছু যায় আসে না। কারণ, জনগণকে তাদের দরকার নেই।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়িয়েছেন, কোথায় যাবে মানুষ? আপনাদের পকেটে বহু দুর্নীতি-ঘুষের টাকা আছে। আমাদের পকেটে তো ভাই নিজেদের বেঁচে থাকার পয়সাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা রাজনীতি, অর্থনীতি ও আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। সুতরাং এই সরকারকে আর টিকতে দেওয়া যায় না। এ জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি।’ সব রাজনৈতিক দলের কাছে আবারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিভেদ সৃষ্টি না করে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরি করা, একটা সাম্য তৈরি করা, সেই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করি।’

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে বেআইনিভাবে, অযৌক্তিকভাবে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে, পুলিশ ও র‍্যাব দিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ওই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বহু হত্যা, খুন, গুম করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় নুরে আলম ও আবদুর রহিমকে হত্যা করা হয়েছে। এই দুই নেতাকে হত্যার অভিযোগে ভোলার ওসি (তদন্ত) আরমানকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’ ভোলার ঘটনায় এখনো ১৯ জন হাসপাতালে আছেন বলেও জানান বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, সরকার চিপায় পড়ে এখন সব চাপ জনগণের ওপর দিচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করে সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রতিরোধ করে প্রতিবাদের জোয়ারে এই সরকারকে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের যাঁরা হত্যা করেছেন, তাঁদের বিচার এই দেশেই হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, হত্যা করে আন্দোলন থামানো যাবে না। তারা রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম, জাতীয়তাবাদী তাঁতি দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয়তাবাদী কৃষকদের সহসভাপতি মামুনুর রশিদ খান, জামাল উদ্দিন খান, নাসির হায়দার প্রমুখ।