জাতীয় সংসদ নির্বাচন: দেড় শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষকের আবেদন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাচ্ছে না। তবে তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে।
আফ্রিকান ইলেকটোরাল অ্যালায়েন্স থেকে ১১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আবেদন করেছেন। তাঁদের সবাই উগান্ডার নাগরিক।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেড় শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছেন। এর বাইরে নির্বাচনের খবর সংগ্রহে আবেদন করেছেন ৭১ জন বিদেশি সাংবাদিক। এই আবেদনগুলো এখন যাচাই (ভেটিং) করছে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যাচাই শেষে আবেদনকারীদের কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি না–ও পেতে পারেন।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি ইসিতে নিবন্ধিত দেশি সংস্থাগুলোও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়ে থাকে। এবার নির্বাচন সামনে রেখে দুই দফায় ৯৬টি দেশি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন দেয় ইসি। তাদের বেশ কিছু সংস্থা নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড়। এসব সংস্থা থেকে মোট কতজন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা বিদেশি কয়েকজন নাগরিককে পর্যবেক্ষক হিসেবে এনে বিতর্ক তৈরি করেছিল। ওই সংস্থার মহাসচিব আবেদ আলী। তাঁর আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইলেকশন মনিটরিং ফোরামও এবার নিবন্ধন পেয়েছে। এই সংস্থার মাধ্যমে কয়েকজন বিদেশি নাগরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে আসার জন্য আবেদন করেছেন বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক ও বিদেশি সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন (অনুমতিপত্র) কার্ড দেওয়ার বিষয়ে আজ নির্বাচন কমিশনে বৈঠক।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত এবং অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন। এর বাইরে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা (বিদেশি) ছিলেন ৬৪ জন। বিভিন্ন দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ কর্মকর্তাও (সবাই বাংলাদেশি) নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
অন্যদিকে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন গত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের আবেদন আহ্বান করে গত অক্টোবরে বিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি। আগ্রহীদের ২১ নভেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। পরে আবেদনের সময় ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ইসি সূত্র জানায়, গত শুক্রবার পর্যন্ত হালনাগাদ হিসাবে তাদের কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের (বিদেশি) জন্য সব মিলিয়ে ২২৭টি আবেদন এসেছে। এর মধ্যে ১৫৬ জন আবেদন করেছেন পর্যবেক্ষক হিসেবে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও কেউ কেউ পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনকারীদের বাকি ৭১ জন বিদেশি সাংবাদিক।
ইসির বর্তমান নীতিমালায় বলা আছে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কঠোরভাবে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, পর্যবেক্ষণের সময় যথাযথ পরিচয় প্রদান করতে হবে, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রথমে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে হবে এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আইনানুগ নির্দেশনা মানতে হবে। পর্যবেক্ষকদের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে হবে, পর্যবেক্ষক দল (কোনো মিশন) আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষকদের কেউ ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে পারবেন না। পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্র থেকে ফেসবুক, টুইটার বা এ ধরনের কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি কিছু সম্প্রচার করতে পারবেন না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে না বলে আগেই জানিয়েছে। তবে তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল পর্যবেক্ষণে থাকবে। চার সদস্যের দলটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। কমনওয়েলথ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটও (এনডিআই) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। এবারও সে ধরনের আবেদন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ২৯ কর্মকর্তাকে (তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও রয়েছেন) বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে অ্যাক্রিডিটেশন (অনুমতিপত্র) দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে আফ্রিকান ইলেকটোরাল অ্যালায়েন্স (এইএ) থেকে ১১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য আবেদন করেছেন। তাঁদের সবাই উগান্ডার নাগরিক। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আরও কিছু আবেদনও এসেছে। যাচাই শেষে শেষ পর্যন্ত তাঁদের সবাই অবশ্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি পাবেন না বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য করা ইসির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে করতে চাইলে প্রথমে ইসির কাছে আবেদন করতে হয়। ইসি সে আবেদন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ছাড়পত্রের জন্য পাঠিয়ে দেয় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ছাড়পত্র পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপর ভিসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইসি সূত্র জানায়, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও বিদেশি সাংবাদিকদের ভিসা ক্লিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) ও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার বিষয়ে আজ রোববার নির্বাচন কমিশনে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেবেন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক আবেদন ইসি পেয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এগুলো যাচাই (ভেটিং) করছে। আবেদনকারীদের সবাই শেষ পর্যন্ত না–ও টিকতে পারেন। ভেটিং শেষে চূড়ান্ত সংখ্যা বলা যাবে।