নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে ফিরছে বিএনপি

সামনে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মসূচি কম থাকবে। বেশির ভাগ কর্মসূচি হবে মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে।

বিএনপি

আগামী মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবার যুগপৎ কর্মসূচিতে ফিরতে চাইছে বিএনপি। দলটির সূত্রগুলো বলছে, এবার জেলা, মহানগর বা বিভাগীয় পর্যায়ে বড় সমাবেশ, মানববন্ধন অথবা অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে এর শুরু হতে পারে। এরপর আন্তজেলা বা বিভাগে রোডমার্চের মতো যুগপৎ কর্মসূচি আসতে পারে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নতুন করে কোন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বও কর্মসূচি ঠিক করার প্রশ্নে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। গত মঙ্গলবার রাতে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে।

তবে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। গণতন্ত্র মঞ্চ এবং ১২-দলীয় জোটের নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, বিএনপি একক সিদ্ধান্তে কর্মসূচি ঠিক করে শরিক দল ও জোটগুলোকে সেই কর্মসূচি চাপিয়ে দেয়। এবার বিএনপি অবশ্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করার কথা বলছে। বিএনপির নেতাদের অনেকে বলছেন, এবার প্রথমে বিএনপি কর্মসূচির খসড়া তৈরি করবে। এরপর যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।

আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে অর্থাৎ কোরবানির ঈদের আগেই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে শক্ত গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।

দলটির সূত্র জানিয়েছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিএনপির নিজস্ব কিছু কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) বিএনপির নেতাদের নিয়ে কর্মশালা করবে। ডিআই বাংলাদেশের বড় দলগুলোর নেতাদের নিয়ে আলাদাভাবে এ ধরনের কর্মশালার আয়োজন করে থাকে।

ডিআইয়ের আয়োজনে ওই কর্মশালার বাইরে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে সমাবেশ এবং ৫ মে জলবায়ুবিষয়ক সেমিনার করবে বিএনপি। দলটি ১ মে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে শ্রমিক সমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে। ওই দিন বেলা আড়াইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে বড় আকারে শ্রমিক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করবে বিএনপি। এই কর্মসূচি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় তিনি শ্রমিক সমাবেশ সফল করতে শ্রমিক দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

চলমান সংকটের সমাধানও রাস্তায় করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিও দেওয়া হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

বিএনপির পাশাপাশি চলমান আন্দোলনে যুক্ত অন্য দল ও জোটগুলোও মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এর মধ্যে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ কিছু জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করার কথা ভাবছে। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের আরেক শরিক ১২-দলীয় জোটের এই সময়ে কোনো কর্মসূচি নেই।

যুগপৎ আন্দোলনে শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী ৩০ এপ্রিল আমাদের সঙ্গে (১২-দলীয় জোট) বিএনপির বৈঠক আছে। সেখানে নতুন আঙ্গিকে, নতুন উদ্যমে কর্মসূচি আসবে।’

এবার পুরো রোজার মাসেই নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিল বিএনপি। ইফতার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাস্তার কর্মসূচিতেও তারা সরব ছিল। এই রোজাতেই সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপজেলা, জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্তরে দুই ঘণ্টার ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করে। নতুন করে যুগপৎ আন্দোলনের যে কর্মসূচি আসবে, তা আগের চেয়ে জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোডমার্চের মতো কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট দল ও জোটের নেতারা জানিয়েছেন। যদিও রোডমার্চের মতো কর্মসূচি কতটা নির্বিঘ্নে করা যাবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে সংশয় আছে।

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের উসকানিমূলক আচরণ সম্পর্কে সচেতন আছি। আমরা সরকারের উসকানি পরিহার করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করব।’

এবার বেশির ভাগ কর্মসূচি হবে মহানগর ও বিভাগে

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সামনে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মসূচি কম থাকবে। বেশির ভাগ কর্মসূচি হবে মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে। দলটির নেতারা জানান, এবার তাঁরা নানা আঙ্গিকে মাঠপর্যায়ে অনেক কর্মসূচি করেছেন। সর্বশেষ ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহ সব বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি অথবা মানববন্ধন ও প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি হয়। এর আগে সারা দেশের মহানগর, থানা ও উপজেলায় এবং সব মহানগর ও জেলা সদরে দুই ঘণ্টার ‘অবস্থান কর্মসূচি’ হয়। এক দিনেই প্রায় ৬৫০টি স্থানে একযোগে অবস্থান কর্মসূচি হয়।

বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। কখনো এককভাবে, আবার কখনো বিভিন্ন দল ও জোটকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি করছে।

আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে ২০ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তার আন্দোলন ছাড়া কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজে থেকে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। চলমান সংকটের সমাধানও রাস্তায় করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিও দেওয়া হবে।

তবে বিএনপিকে এবার শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে হবে। এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে বলে বিএনপির নেতারা বলছেন।