দরকারে গলায় গামছা বেঁধে দাবি আদায়: মান্না

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত পদযাত্রায় নেতারা
ছবি: প্রথম আলো

গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে প্রয়োজনে গলায় গামছা বেঁধে আন্দোলন করা হবে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত পদযাত্রা–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো আজ শনিবার সারা দেশে থানায় থানায় পদযাত্রা করছে। সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা সমবেত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর তারা কাকরাইলে নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড়ে পদযাত্রা শেষ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ঘোষণা করেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে আগামী ১১ মার্চ গণতন্ত্র মঞ্চ মানববন্ধন করবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে আন্দোলন করছি। কিন্তু এই সময়েরও একটা সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা যদি থাকে, তাহলে দরকার লাগে গলায় গামছা বেঁধে যাতে আমাদের দাবি আদায় করতে পারি, আমরা সে চেষ্টা করব। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সেটা করতে থাকব, আমরা বিজয় অর্জন করব—এই প্রত্যয় আমরা করি।’

নাগরিক ঐক্যের এই নেতা আরও বলেন, ‘তথাকথিত সংলাপের কথাবার্তা বাজারে ছাড়ছেন। কার সঙ্গে সংলাপ? যিনি আমাদের ডেকে নিয়ে সংলাপে (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) তাঁর স্বর্গীয় পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন—‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মিথ্যা কথা বলতে পারি না। আপনারা নির্বাচনে আসেন, আমরা এই নির্বাচন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত করব। ওই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা (জনগণ) দেখেছেন। অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি না যাচ্ছেন, তাঁর এ সমস্ত কোনো কথাই বিশ্বাস করছি না। যদি সংলাপ করতে চান আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। তারপরে আমাদের কথা আছে। আমরা কি হলে সত্যি সত্যি আপনাদের মতো মিথ্যুকদের সঙ্গে কথা বলতে পারি সেই কথা ঠিক করব।’

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে কীভাবে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা না নিয়ে কীভাবে আরও সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়, আরও টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়, হাজার হাজার টাকা লুট করা যায় আর সেখান থেকে কীভাবে ভাগ বসানো যায়, তা নিয়ে মন্ত্রী-আমলাসহ সরকারের সমস্ত লোক ব্যস্ত। তিনি বলেন, ‘এরা মনে করছে, দ্রব্যমূল্য যতই বাড়ুক আমাদের হাতে দুইটা অস্ত্র আছে, সেই অস্ত্র দিয়ে আমরা ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখব। একটা হচ্ছে, আমরা দেশের মানুষকে ভয় দেখাব। আরেকটা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশি প্রভুদের খুশি করব।’

সরকারের উদ্দেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এর আগেও বলেছি, সংলাপ হতে পারে একটি মাত্র শর্তে। সেটি হলো, আপনারা কীভাবে পদত্যাগ করবেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে তা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। আগে আপনাদের ঘোষণা করতে হবে নির্বাচনের পূর্বে আপনারা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবেন।’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নাম করে দেশে একটা অশান্তি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। ইতিমধ্যে মানুষ এটাকে নাম দিয়েছে, আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ—একটা ভয় এবং আতঙ্কের কারণে। এই শান্তি সমাবেশ কার্যত একটা নার্ভাস সমাবেশে পর্যবসিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করছে তারা গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল থেকে এখন পুরোপুরি একটা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দলে পর্যবসিত হয়েছে।’

ভাসানী অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান সঞ্চালনায় সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।