সরকার সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তরের এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জি এম কাদেরছবি: সংগৃহীত

সরকার ‘সিন্দাবাদের দৈত্য’ হয়ে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শক্তি-সামর্থ দিয়ে এ দেশকে দখল করে ফেলেছে। এখন জনগণের কথার কোনো দাম নেই, এখন তাদের কথায় জনগণকে চলতে হচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জি এম কাদের।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতি আজ চরম সংকটময় সময় পার করছে। দিন যতই যাচ্ছে, সংকটের গভীরতা ততই বাড়ছে। আগে আমরা যেটাকে সংকট বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, সেটা কোনো সংকটই ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারছেন না। জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। টাকার অবমূল্যায়নে ডলারের দাম বেড়ে গেছে, মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ কাজ পাচ্ছে না, খেতে পাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় একটি শ্রেণি ইউরোপের স্টাইলে জীবন যাপন করছে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিশাল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা।

ধনী–গরিবের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশে একটা শক্তিশালী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক দল বলে মনে হয় না। বৈষম্য সৃষ্টির জন্য কোনো পুরস্কার থাকলে বাংলাদেশ নোবেল প্রাইজ পেত। চাকরি, ব্যবসা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই প্রথম প্রশ্ন, ‘আপনি সরকারি দলের সদস্য কি না।’ দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘আপনার পরিবারের কেউ সরকারি দলের বাইরে অন্য কোনো দল করেন কি না।’ যে রাষ্ট্রের জন্য মানুষ জীবন দিল, সেই রাষ্ট্র আজ চলে গেছে একটি গোষ্ঠীর হাতে। যাঁরা আওয়ামী লীগের বাইরে, তাঁরা অবাঞ্ছিত। অবস্থা এমন যেন...থাকলে দাস হিসেবে থাকেন, না থাকলে যান। কথা বলার অধিকার নেই কারও।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকাল নির্বাচনে লোকজন যান না। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা গেলেই কী, আর না গেলেই কী!” একদলীয় শাসনব্যবস্থা সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে মানুষের কাঁধে বসে আছে। সামনের দিকে রাজনীতি আরও কঠিন হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা মানুষের পাশে থাকব নাকি সুযোগ-সুবিধার পক্ষে থাকব।’

জি এম কাদের আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। হঠাৎ গত বছর ১৭ হাজার হয়ে গিয়েছিল। তখন ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া ১০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎও নেওয়া হয়নি। অথচ ২৭ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার করতে পারছেন না, তাহলে বানালেন কেন?’

ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সুলতান আহমেদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের। সভার মহানগর উত্তরের ২৬ থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।