জুলাই সনদে সই করা দলের ১৯টি নিবন্ধিত

কোন দলের কারা কারা জুলাই সনদে সই করল, তা দেখাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১টি বাদে ২৪টি দল ও জোটের ৪৮ জন নেতা সনদে সই করেন।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল শুক্রবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই সনদ সই হয়। সেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়।

সনদে সই করা নেতাদের দল ২২টি এবং জোট ২টি (১২–দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট)। যে ২২টি দল সনদে সই করেছে, তাদের ৪টির নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন নেই। ১৮টির আছে। দুই জোটের যে চারজন নেতা সই করেছেন, তাঁদের তিনজনের দল নিবন্ধনহীন। একেক দল ও জোটের পক্ষে দুজন নেতা সনদে সই করেন।

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ২৫টি দলের নেতাদের নাম জানিয়েছে, যাঁরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। দলগুলো ও নেতারা হলেন—

১. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির।

২. খেলাফত মজলিসের আমির আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের।

৩. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।

৪. আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।

৫. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।

৬. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন।

৭. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

দুই জোটের যে চারজন নেতা সই করেছেন, তাঁদের তিনজনের দল নিবন্ধনহীন। একেক দল ও জোটের পক্ষে দুজন নেতা সনদে সই করেন।

৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ।

৯. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব।

১২. গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।

১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।

১৫. ১২-দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এবং জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে এই আলোচনায় ডাকা হয়নি। এসব দলকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
কোন দলের কারা কারা জুলাই সনদে সই করল, তা দেখাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়
ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।

১৭. গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।

১৮. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্র ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ।

১৯. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস।

২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মুসা বিন ইযহার।

২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।

২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)।

২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।

২৪. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।

২৫. আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।

আরও পড়ুন

কারা সনদে সই করেনি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া ছয়টি দল সনদে সই করেনি। দলগুলো হলো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ ও গণফোরাম।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে সই না করার ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল এনসিপি। সে অনুযায়ী তারা অনুষ্ঠানে যায়নি।

অন্যদিকে চার বাম দল গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল, সব দলের ঐকমত্য না হওয়া, তাদের কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আমলে না নেওয়া, ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হওয়াসহ কয়েকটি কারণে তারা সনদে সই করবে না।

গণফোরাম গতকাল অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও সনদে সই করেনি। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সনদে সংশোধন করা হয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এখন তাঁরা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাক্ষর করবেন।

সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন দুই পর্বে আলোচনা করে জুলাই সনদ তৈরি করেছে। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা।

আরও পড়ুন

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোকে এই আলোচনায় ডাকা হয়নি। এসব দলকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। মূলত ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা বিবেচনা করে দলগুলোকে বাছাই করেছিল ঐকমত্য কমিশন।

রাজনীতি হচ্ছে একধরনের খেলা। সেখানে পরাজিতের কোনো মতামত থাকে না। পরাজিত যদি কোনো দিন ফিরে আসে, তাহলে আগের বিষয়গুলো থাকে না। ‘আইডিয়ালিস্টিক’ভাবে (আদর্শিক) কোনো কিছু দেখার সুযোগ নেই। এখন রাজনীতিতে ‘আইডিয়ালিজমের’ জায়গা নেই।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ৩০টি দল ও জোট আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। ২৪টি দল সই করেছে। সংখ্যার দিক দিয়ে এটা খারাপ নয়। চারটি বাম দলের সই না করা তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে এনসিপির অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা তরুণেরা দলটি গঠন করেছেন।

বাংলাদেশে কোনো কিছুকে ‘জাতীয়’ বলে দেওয়ার একটা প্রবণতা আছে উল্লেখ করে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনীতি হচ্ছে একধরনের খেলা। সেখানে পরাজিতের কোনো মতামত থাকে না। পরাজিত যদি কোনো দিন ফিরে আসে, তাহলে আগের বিষয়গুলো থাকে না। ‘আইডিয়ালিস্টিক’ভাবে (আদর্শিক) কোনো কিছু দেখার সুযোগ নেই। এখন রাজনীতিতে ‘আইডিয়ালিজমের’ জায়গা নেই।