রাজপথে স্রোত সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫০ বছর পূর্তির আলোচনা সভায় বক্তারা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ২ নভেম্বরছবি: প্রথম আলো

জনসাধারণের জীবনে দুঃখের সীমা নেই। মানুষ এখন খেপে গেছে। গাড়ি, ট্রেন ছাড়াই হেঁটে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। মানুষের স্রোত কোনোভাবেই সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘স্বৈরাচারের পতন ও রাষ্ট্র রূপান্তরে গণজাগরণ গড়ে তুলুন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জেএসডি।

সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ প্রায় শূন্য। আমদানি করার টাকা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সামর্থ্য মানুষ নেই। মানুষের দুঃখের সীমা নেই। দুঃখের কথা শোনার মানুষ নেই। বলার জায়গা নেই। বললে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।’

বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার পর আরেকটা স্বৈরাচার যেন না আসে, তার গ্যারান্টি চেয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘মানুষ খেপে গেছে। এমন খ্যাপা খেপেছে, গাড়ি নেই মানে না, ট্রেন নেই মানে না, রিকশা চলে না মানে না। মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে।’

বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। অনুষ্ঠান সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ভদ্রভাবে এই সরকার না গেলে পালাতেও পারবে না। যাঁদের খুন, গুম করেছে, তারা পালাতে দেবে না। তিন মাস পর টাকা দিলেও খাবার পাওয়া যাবে না। এই সরকার উৎখাত করা ছাড়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও অপশাসন থেকে মুক্তিলাভ করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে সরকার দেশকে নতুন একটি দুর্যোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, সরকার বিদায় নেবে। কিন্তু আইএমএফের ঋণ ১৮ কোটি মানুষের ওপর থেকে যাবে। এটা হতে দেওয়া হবে না।

আগামী ডিসেম্বরে গণতন্ত্র মঞ্চের ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকবে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, আগামী এক বছর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজপথে মানুষ দাঁড়াচ্ছে। মানুষের স্রোত কোনোভাবেই সরকারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

সাইফুল হক বলেন, বরিশালে বিএনপির যে সমাবেশ হবে, ‘পুলিশ যেসব শর্তে অনুমোদন দিয়েছে, তার একটি হলো মাঠ অর্ধেক খালি রাখতে হবে। এমন শর্ত জীবনে কখনও শুনিনি। যেভাবে মানুষ জেগে উঠছে, নদীতে আপনাদের জায়গায় হবে না, বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া আত্মরক্ষা হবে না।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সম্প্রতি খাদ্যসহ সবকিছু যেসব দেশ থেকে আমদানি করার চিন্তা করছেন, তা টাকাপয়সা লুট করে বিদেশে পাচার করার একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্ভবত এই সরকার মনে করছে, ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। তারা ভেগে যাওয়ার আগে, পালিয়ে যাওয়ার আগে, এ দেশকে লুট করে সর্বস্বান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এই সরকারের হাতে আর দেওয়ার কিছু নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আন্দোলন করে সরকারকে নামিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আগামী ডিসেম্বরে আন্দোলন–সংগ্রাম তৈরি হলে প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন তালুকদার প্রমুখ।