ফুলপরী ‘ছাত্রলীগের প্রতিবাদের নাম’, বললেন সভাপতি সাদ্দাম

র‌্যাগিং ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ মিছিল করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ জানানো ছাত্রী ফুলপরী খাতুনের সাহসিকতা ও অদম্য স্পৃহার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেছেন, ফুলপরী বাংলাদেশে বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামালের সত্যিকারের উত্তরসূরি। ফুলপরী ছাত্রলীগের প্রতিবাদের নাম। ফুলপরী ন্যায়বিচারের প্রতীকের নাম। ছাত্রলীগ ফুলপরীদের পক্ষে রয়েছে।

আরও পড়ুন

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এসব কথা বলেন।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তাঁর ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে নির্যাতন করেছেন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল করা ছাড়াও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। নির্যাতনের ঘটনায় এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেছেন, ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

‘অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট র‍্যাগিং অ্যান্ড সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ইন ক্যাম্পাস’ (ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচার) শীর্ষক এ সমাবেশের আগে নির্যাতন ও যৌন হয়রানিবিরোধী প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে মধুর ক্যানটিন থেকে পদযাত্রা বের করা হয়। পরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ, পাশেই আর্ট ক্যাম্প ও সমাবেশের পর সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হয়।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে, তা ছাত্রসমাজের হৃদয় ছুঁয়েছে। ওই ঘটনা শুনে আমরা বেদনায় নীলকণ্ঠ হয়েছি।
সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগ সভাপতি

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন ও হতাশ করে। র‍্যাগিং ও যৌন নির্যাতন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির সিলেবাসের আওতাভুক্ত ছিল না। সব সময় আমরা এটিকে ট্যাবু বলেছি। দেশে এই বাস্তবতা রয়েছে যে আমরা র‍্যাগিংকে একধরনের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন, তাঁদের মর্যাদাহানি কিংবা উপহাস বা কৌতুক করাকে অনেক সময় র‍্যাগিং বলে আমরা বৈধতা বা নমনীয়তা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলো বিঘ্নিত হয় উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই, র‍্যাগিং একটি ক্রিমিনাল অফেন্স, একটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমরা এ বিষয়ে সচেতন করতে চাই। এসব ঘটনার পেছনে ছাত্রসংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ প্রশাসন, হল-হোস্টেল প্রশাসন সবারই দায় রয়েছে বলে আমরা মনে করি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে প্রত্যাশিত মাত্রায় সচেতনতা নেই বলে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।’

র‌্যাগিং ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ মিছিল করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনের প্রশংসা করে সাদ্দাম বলেন, ‘কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটেছে, তা ছাত্রসমাজের হৃদয় ছুঁয়েছে। ওই ঘটনা শুনে আমরা বেদনায় নীলকণ্ঠ হয়েছি। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী যে সাহসিকতা ও অদম্য স্পৃহা দেখিয়েছে, আমরা মনে করি যে সে র‍্যাগিং ও যৌন নির্যাতনবিরোধী এই আন্দোলনেরও প্রতীক।’

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ফুলপরীকে স্যালুট ও অভিবাদন জানান সংগঠনটির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ফুলপরীদের পক্ষে রয়েছে। নিপীড়কের যে দল, ক্ষমতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা পরিবারের পরিচয়ই থাকুক, আমাদের ন্যায়বিচারের ইস্পাতদৃঢ় লড়াইয়ের সামনে সব দম্ভ ও প্রশাসনিক অসারতাই ভেঙে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ও হল-হোস্টেল প্রশাসন ও প্রক্টরকে এসব ঘটনায় দায়িত্বভার নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে আইন ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘র‍্যাগিং ও যৌন হয়রানির প্রতিটি ঘটনায় যেন আমরা নিপীড়িতের পাশে থাকি। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কেউ ক্রিমিনাল অফেন্সে (ফৌজদারি অপরাধ) সম্পৃক্ত হবেন, শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করবেন কিংবা শারীরিক-মানসিক নিপীড়নের ঘটনা ঘটাবেন, সেই সুযোগ নেই। এসব ঘটনায় সম্পৃক্ত কারও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসার কোনো সুযোগ নেই।’

আগামী দিনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে র‍্যাগিং ও যৌন হয়রানিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, পদযাত্রা, আর্ট ক্যাম্প ও লিফলেট বিতরণ করতে হবে।

আগামীকাল সোমবার ও পরদিন মঙ্গলবার সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, পদযাত্রা, আর্ট ক্যাম্প ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালিত হবে এবং পরবর্তী তিন দিন কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান সাদ্দাম হোসেন।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আত্মমর্যাদাকে সম্মান করতে হবে। ভালো ব্যবহার, বিনয়ী আচরণ ও আন্তরিকতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হৃদয় জয় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিগ ব্রাদার হওয়া নয়, আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট সিটিজেন হওয়া; সিট পলিটিকস নয়, আমাদের লক্ষ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হওয়া।’

চাঁদাবাজি বা অনৈতিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া, ছাত্ররাজনীতিকে অর্থ আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার ছাত্রলীগের লক্ষ্য নয় উল্লেখ করে সাদ্দাম বলেন, ছাত্রলীগের লক্ষ্য সফল উদ্যোক্তা হওয়া ও সব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়া।

এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘প্রিভেনশন অ্যাগেইনস্ট বুলিং-র‍্যাগিং ইন এডুকেশন পলিসি’র খসড়া দ্রুততম সময়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা অনুসরণ করার আহ্বান জানাই। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল গঠন করতে হবে।

আরও পড়ুন

সাদ্দাম বলেন, ‘র‍্যাগিং ও যৌন নিপীড়নের সমস্যা নিরসনে নিপীড়কদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে অবশিষ্ট শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করতে পারেন, সে জন্যও পর্যাপ্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবছর একটি দিন ঠিক করুন, যে দিনটিকে ছাত্রসমাজ “হ্যারাসমেন্ট-বুলিং-র‍্যাগিং প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে পালন করবে।’

আরও পড়ুন

এ ছাড়া গণমাধ্যমের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ছাত্ররাজনীতিকে শুধু নেতিবাচকভাবে দেখানো কোনো সম্পাদকীয় নীতি হতে পারে না। ছাত্রসংগঠনগুলোর ভালো কাজকে গণমাধ্যমে নিয়ে এলে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত কর্মীরা ভালো কাজের প্রতি আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে ছাত্ররাজনীতিতে শুভ কাজের প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির।

আরও পড়ুন