জাতীয় পার্টির চার অংশ এক মঞ্চে, নেই জিএম কাদেরের জাপা

এইচ এম এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় জাতীয় পার্টির চারটি অংশের নেতা ও সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া নেতারা যোগ দেন। ঢাকা, ১৪ জুলাই
ছবি: বিজ্ঞপ্তি

জাতীয় পার্টির চার অংশের নেতারা এক মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন। জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া তিন জ্যেষ্ঠ নেতাও এতে যোগ দেন। তবে এই মঞ্চে জিএম কাদেরের অনুসারী কোনো নেতা ছিলেন না। আয়োজকেরা বলছেন, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাঁরা এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে এসেছেন।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘পল্লিবন্ধু এরশাদ স্মৃতি সংসদ’ নামের একটি সংগঠন এই স্মরণসভার আয়োজন করে। এর উদ্যোক্তা জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত তিন জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু। আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে আয়োজিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও জাতীয় পার্টি (মতিন)-এর নেতারা এতে যোগ দেন।

স্মরণ সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পর নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু যেনতেন নির্বাচন নয়। যদি আগের সেই (নির্বাচনের) পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো কোনো লাভ নাই। আগে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা আনতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে— কেবল তখনই নির্বাচন চাই।’

আরও পড়ুন

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘যারা জুলাই আন্দোলন করেছে, তারা মনে করেছিল বাংলাদেশকে পরিবর্তন করবে। একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আজ আইনশৃঙ্খলার অবস্থা কী? এই যে সোহাগ (লাল চাঁদ) হত্যা, আইয়ামে জালিয়াতেও এ রকম নির্মমভাবে কেউ কাউকে হত্যা করেনি।’

এক বছরে ১৪ শ লোককে হত্যা করা হয়েছে— এমন দাবি করে আনিসুল ইসলাম বলেন, এর মধ্যে ১২৪ জন প্রাণ হারিয়ে রাজনৈতিক কারণে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। তাহলে কী পরিবর্তন হয়েছে?

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এই অস্থির সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ...আমাদের উচিত হবে, সবাই মিলে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা।’

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমাকে বলা হয় আমি জাতীয় পার্টি ভেঙেছি। কিন্তু আমি দল ভাঙিনি, দল আমাকে বের করে দিয়েছে। আমার নেতৃত্বে আন্দোলন করে এরশাদকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলাম। আমি সব সময় বলে এসেছি ঐক্যের কথা। আজ এরশাদ সাহেবের স্মরণসভায় এসে বৃহত্তর ঐক্যের যে কথা শুনছি। তা যদি বাস্তবে কার্যকর করা যায়, তাহলে দেশ ও দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার বলা হচ্ছে।

এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আসুন আমরা শেষ জীবনে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করি। দেশে আবারও পরিবর্তন আসবে। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে যাব।’

মুজিবুল হক চুন্নু অতীত কর্মকাণ্ডে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৪৫ বছর চলার পথে আমাদের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। জানা-অজানা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনেক ভুল করেছি। সেই ভুলের জন্য আমরা দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’ তিনি দ্রুত দলের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গঠনের অপেক্ষায় আছেন বলে মন্তব্য করেন।

জিএম কাদেরের উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্টির (রওশন এরশাদ) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘যারা বিপ্লব নিয়ে তামাশা করেন, ঠাট্টা-মশকরা করেন, টোকাই বলেন, তাদের সম্পর্কে বলতে হয় তারা বিপ্লব করেন নাই, দেখেন নাই। ...আমরা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। আপনি কোনোদিকে ছিলেন না, বসে ছিলেন। কোনদিক জিতবে সেই দিক গিয়ে পতাকা ধরবেন। আপনি সেই সুযোগসন্ধানী লোক, ভাইয়ের মৃত্যুর পর সেই সুযোগ নিয়েছেন।’

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নাজমা আক্তার, জিয়াউল হক মৃধা, জনতা পার্টি বাংলাদেশের (জেপিবি) প্রধান উপদেষ্টা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, জাপার সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম মিলন, লিয়াকত হোসেন খোকা, সাহিদুর রহমান টেপা, মোস্তফা আল মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া প্রমুখ।